
আজ ইস্টার সানডে—বিশ্বব্যাপী খ্রিষ্টধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন। যিশুখ্রিষ্টের গৌরবময় পুনরুত্থানের মহোৎসব এটি, যা ‘শুভ পাস্কা পর্ব’ বা ‘ইস্টার সানডে’ নামে পরিচিত। খ্রিষ্টান ধর্মবিশ্বাস অনুসারে, যিশু তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের মাধ্যমে মানবজাতিকে পাপ থেকে মুক্তি দিয়ে স্বর্গে যাওয়ার পথ উন্মুক্ত করেছেন।
এই উপলক্ষে গাজীপুরের কালীগঞ্জে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয় খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে।
রোববার (২০ এপ্রিল) উপজেলার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়গুলো ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি গির্জায় ধর্মীয় আচার-অনুশাসন, রীতিনীতি, ধর্মীয় আলোচনা ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। এতে অংশগ্রহণ করেন সহস্রাধিক ধর্মপ্রাণ খ্রিষ্টভক্ত। কালীগঞ্জে মোট ৬টি গির্জায় একযোগে প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ৬টা ও ৯টায় যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় মিশা (Mass) অনুষ্ঠিত হয়। গির্জার পাল পুরোহিতগণ বিশেষ প্রার্থনার মাধ্যমে মিশার সমাপ্তি ঘোষণা করেন। উপস্থিত খ্রিষ্টভক্তরা দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ৪০ দিনের উপবাস শেষে খ্রিষ্টভক্তরা এই দিনটিকে উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করেন। তারা দই-চিড়া এবং খই দিয়ে বিশেষ খাবারের আয়োজন করেন এবং আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়নে এই খাবারকেই প্রাধান্য দেন।
সকালে মিশা শুরুর আগে বিভিন্ন বয়সী খ্রিষ্টভক্তগণ দলবদ্ধ হয়ে গির্জায় আসেন। তারা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন এবং পরে প্রার্থনার মূল অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
কারিতাসের সাবেক কর্মকর্তা মি. বাদল ব্যাঞ্জামিন রোজারিও বলেন, “৪০ দিনের উপবাসের মাধ্যমে আত্মসংযম ও ত্যাগ স্বীকারের পর আজ আমরা পাস্কা পর্ব উদ্যাপন করছি। এই দিনে আমরা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে মিলিত হই, পারস্পরিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করি এবং অতিথিদের দই-চিড়া দিয়ে আপ্যায়ন করি।”
আরেক খ্রিষ্টভক্ত, হাউজিং সোসাইটির ভাইস চেয়ারম্যান ডিউক প্রদীপ রোজারিও জানান, “আমি ঢাকায় থাকি। তবে আজকের দিনে সবাই বাড়িতে ফিরে আসেন। এতে করে একে অপরের সঙ্গে দেখা হয় এবং আনন্দ ভাগাভাগি করা যায়।”
তুমলিয়া ধর্মপল্লীর পাল পুরোহিত ফাদার কুঞ্জন কুইয়া মিশা পরিচালনা ও বাইবেল থেকে ধর্মীয় আলোচনা করেন। তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি প্রভু যিশুখ্রিষ্ট মৃত্যু জয় করে নতুন জীবনে প্রবেশ করেছেন। পাপের জীবন পরিত্যাগ করে আমরা নিজেরাও পুনরুত্থানের অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি। আজকের দিনে আমরা দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করি।”
ইস্টার সানডে উপলক্ষে নেওয়া হয়েছিল বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলাউদ্দিন জানান, “নিরাপত্তা জোরদারের লক্ষ্যে তিন দিন আগে থেকেই গির্জায় আমাদের পুলিশ সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন। কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই আমরা সুষ্ঠুভাবে উৎসব সম্পন্ন করতে পেরেছি।”
এছাড়াও গির্জার বাইরে আয়োজন করা হয় মেলার। সেখানে ছিল হরেক রকমের খাবার ও বাহারি খেলনার দোকান। গির্জায় আগত দর্শনার্থীরা আনুষ্ঠানিকতা শেষে মেলা থেকে নিমকি, মোয়া, মুড়ালি, চানাচুর, ঝালমুড়ি, চটপটি, ফুসকাসহ নানা রকম খাবার ও খেলনা কিনে বাড়ি ফেরেন।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর