
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন বলেছেন, “অনেক সময় আমাকে শুনতে হয়-আপনারা দুর্নীতির কথা বলেন, কিন্তু নিজের অফিস তো দুর্নীতিগ্রস্ত। এটা কি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো কথা? মোটেও না। আমি একে অস্বীকার করি না। আমাদের মধ্যেও যদি দুর্নীতি থেকে থাকে, আপনারা দেখিয়ে দিন, আমরা চেষ্টা করব সেখান থেকেও বেরিয়ে আসতে। কারণ, যদি দুদকই দুর্নীতি করে, তাহলে আর কারও কিছু বলার থাকে না।”
রবিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত গণশুনানীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রংপুর দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের আয়োজনে এবং জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় এ শুনানী অনুষ্ঠিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল—“সবাই মিলে গড়বো দেশ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।”
দুদক চেয়ারম্যান আরও বলেন, “বাংলাদেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় আমার ধারণা, নীলফামারীতে দুর্নীতির প্রকোপ কম। ঢাকার অবস্থা এর চেয়ে অনেক খারাপ। দুর্নীতির প্রকোপ কম থাকলে সেই জেলাকে মডেল জেলা হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমি আশাবাদী, এক সময় আপনারাই ঘোষণা করবেন—নীলফামারী হবে বাংলাদেশের প্রথম দুর্নীতিমুক্ত জেলা।”
দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে বর্জনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—আমরা নিজেরা দুর্নীতিকে ঘৃণা করি কি না? কোনো দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি যদি অর্থবান হয়, আমাদের দাওয়াতে ডাকে, ভালো খাওয়ায়, আমরা তাতেই খুশি হয়ে যাই। এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে দুর্নীতি দূর হবে না। আপনাদের থেকেই শুরু হোক—দুর্নীতিবাজদের এড়িয়ে চলুন।”
প্রতিষ্ঠান প্রধানদের অবহেলা দুর্নীতির অন্যতম কারণ উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের কাজগুলো ব্যক্তিগত না—প্রাতিষ্ঠানিক। যদি প্রতিষ্ঠান ঠিকমতো কাজ করে, তাহলে অভিযোগ আসার কথা না। অনেক সময় অভিযোগ আদালতে চলে যায়, আইনগত জটিলতা তৈরি হয়। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আমি মনে করি, প্রতিষ্ঠান প্রধানের কমিটমেন্ট না থাকাই মূল সমস্যা।”
চলমান দুর্নীতির চেয়ে ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “প্রফেসর ইউনুস একবার বলেছিলেন—আমরা অতীতের দুর্নীতি নিরসনে এত সময় দেই যে ভবিষ্যতের দুর্নীতি প্রতিরোধের জায়গাটা উপেক্ষিত হয়। আমরা সবাই জানি কোথায় দুর্নীতি হয়—সেখানে এখন থেকেই সতর্ক হতে হবে।”
গণশুনানীতে ৮১টি অভিযোগের মধ্যে ২টি আদালতে বিচারাধীন, কয়েকটি অপ্রাসঙ্গিক হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং ৫৭টি অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে নিষ্পত্তি করা হয়।
শুনানীতে সভাপতিত্ব করেন নীলফামারী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান। বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদক কমিশনার (তদন্ত) মিঞা মুহাম্মদ আলী আকবর আজিজী, মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আখতার হোসেন, এবং রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মো. তালেবুর রহমান।
এসময় জেলার বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অভিযুক্ত ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে অভিযোগকারীদের সরাসরি মুখোমুখি করা হয়। অনেক ভুক্তভোগী ও পেশাজীবী মানুষ লিখিতভাবে অভিযোগ উপস্থাপন করেন এবং বেশ কয়েকটি অভিযোগের বিষয়ে দুদক তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর