
পবিত্র কোরআনে উম্মতে মুহাম্মাদীর হেদায়েতের জন্য আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন নবীর যুগের বিস্ময়কর মুজিজার কথা তুলে ধরেছেন।
কোরআনে বর্ণিত এমন একটি মুজিজার ঘটনা হলো হজরত সালেহ (আ.) এর উটের ঘটনা। সেই যুগের মানুষ সালেহ আ.-এর নবুয়তের সত্যতার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে একটি নিদর্শন দাবি করলো।
আল্লাহ তায়ালা একটি উট পাঠালেন তাদের জন্য। কিন্তু উটটিকে হত্যা করে তারা নিজেদের ওপর আল্লাহর আজাব নির্ধারিত করলো। পুরো ঘটনাটি তুলে ধরা হলো এখানে—
হজরত সালেহ (আ.) যৌবনকাল থেকেই নিজ জাতিকে তাওহিদ তথা একত্ববাদের দাওয়াত দিতে শুরু করেন এবং এ কাজ করতে করতেই বার্ধক্যে উপনীত হন।
তাঁর বারবার পীড়াপীড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে তাঁর জাতির লোকেরা স্থির করল যে তাঁর কাছে এমন কিছু চাইতে হবে, যা দেখাতে তিনি অক্ষম। সে মতে তারা দাবি করল যে আপনি যদি বাস্তবিকই আল্লাহর রাসুল হন, তাহলে আমাদের 'কাতেবা' নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান।
সালেহ (আ.) তাদের এ দাবির ওপর কঠিন শপথ ও প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করলেন যে আল্লাহ তায়ালা তাদের এ দাবি পূরণ করলে তারা ইমান আনবে এবং তাঁকে মান্য করবে।
অতঃপর তিনি নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। সঙ্গে সঙ্গে ওই নিশ্ছিদ্র প্রস্তরটি নড়ে উঠল এবং তা ফেটে একটি গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী উটনী বের হয়ে এলো। এ বিস্ময়কর মোজেজা দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ইমান আনলেও অবশিষ্টরা যখন ইমান আনার ইচ্ছা প্রকাশ করল, তখন তাদের পুরোহিতরা তাদের বিরত রাখল। সালেহ (আ.) নিজ সম্প্রদায়ের অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে দেখে শঙ্কিত হয়ে পড়লেন।
তিনি আল্লাহর আজাব এসে যাওয়ার আশঙ্কা করলেন। তাই নবীসুলভ দয়া প্রকাশ করে বললেন—
এ উটনীর দেখাশোনা করো, একে স্বাধীনভাবে বিচরণ করতে দাও। একে কষ্ট দিয়ো না, তাহলেই তোমরা আল্লাহ আজাব থেকে বেঁচে যেতে পারবে।'
সামুদ জাতি এই উটনীর পরিচর্যা কিছুকাল চালিয়েছিল। তারা একই কূপ থেকে এ উটনী ও অন্য জন্তুদের পানি পান করাত।
কিন্তু এ উটনী যখন পানি পান করত, তখন পানি নিঃশেষে পান করে ফেলত। সালেহ (আ.) এ ফয়সালা দিলেন যে একদিন এ উটনী পানি পান করবে, অন্যদিন সম্প্রদায়ের সবাই পানি নেবে। তবে যেদিন উটনী পানি পান করবে, সেদিন সবাই এই উটনীর দুধ দিয়ে সব পাত্র ভর্তি করে নিত। সার্বিকভাবে পানি উত্তোলন নিয়ে এ উটনীর কারণে বেশ অসুবিধা হচ্ছিল। অন্যদিকে এভাবে পানি খেয়ে, বিভিন্ন প্রান্তরে বিচরণ করে খেয়েদেয়ে উটনীটি অত্যন্ত মোটাতাজা ও ভয়ংকর হয়ে উঠল। ফলে লোকজন উটনীর ওপর ক্ষুব্ধ হতে চলল।
একপর্যায়ে সামুদ জাতির 'মিসদা' ও 'কাসার' নামের দুই যুবক বিভিন্ন প্রলোভনের নেশায় মত্ত হয়ে এই উটনীকে হত্যা করে। সালেহ (আ.) তাঁর জাতিকে আজাবের দিনক্ষণ ঠিক করে দেন।
নিদর্শন মতে প্রথম দিন তাদের সবার মুখমণ্ডল হলদে ফ্যাকাসে হয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন লাল এবং তৃতীয় দিন ঘোর কালো হয়ে গেল। অতঃপর সেদিন শনিবার প্রভাতের সময় গগনবিদারী গর্জন, মুহুর্মুহু বিজলির চমক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল। তারা নিজ নিজ গৃহে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল।
পবিত্র কোরআনে এই ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে—
অতঃপর তারা সেই উষ্ট্রীকে হত্যা করে এবং নিজেদের প্রতিপালকের আদেশ অমান্য করে আর বলে, 'হে সালেহ, তুমি রাসুল হয়ে থাকলে আমাদের যার (যে আজাবের) ভয় দেখাচ্ছ, তা নিয়ে এসো।
তারপর তাদের ওপর ভূমিকম্প আপতিত হলো। ফলে নিজ গৃহে তাদের প্রভাত হলো মুখ থুবড়ানো অবস্থায়।
এরপর তিনি (সালেহ আ.) তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করলেন এবং বললেন, 'হে আমার জাতি, আমি তোমাদের কাছে নিজ পালনকর্তার পয়গাম পৌঁছে দিয়েছি এবং তোমাদের জন্য মঙ্গল কামনা করেছি; কিন্তু তোমরা তো হিতাকাঙ্ক্ষীদের পছন্দ করো না। (সূরা আরাফ, আয়াত : ৭৭-৭৯)
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর