
জীবন বেশিরভাগ সময় কেটেছে পিঠা বিক্রি করে। সারাজীবনের রোজাগার ও মেয়েদের আয়ের টাকা দিয়ে তৈরি করেছেন একটি বসতঘর।
সেই ঘরে বসবাস করে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী নজরুল ইসলাম (৫৬)। তিন শতাংশ জায়গায় নির্মিত নজরুলের ঘর। ঘরের ভিটেমাটিতে অংশীদার নজরুলসহ দুই ভাই ও চার বোন। তবে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ভাই-বোনদের কেউ থাকে না জমিটিতে।
হতদরিদ্র নজরুলই সেখানে একটি ঘরে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু সম্প্রতি নজরুলের মাথা গোঁজার একমাত্র ঘরটি হারাতে বসেছেন। নজরুলের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের দত্তগ্রামে। নজরুল ওই গ্রামের মৃত হাফিজ উদ্দিনের ছেলে।
ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানায়,'নজরুলের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে আল-আমিন পরিবার নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। ছোট ছেলে আলিম উদ্দিন একটি কওমী মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। দুই মেয়ে বিয়ের পর স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
স্ত্রী জাহানারা বেগমকে নিয়ে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ও মানুষের কাছে হাত পেতে খেয়ে না খেয়ে কোনমতে দিন পার করছেন নজরুল। ঠিক এমন সময় নজরুলে 'মরার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়ায় ঘর হারানোর শঙ্কা।
জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টি.আর) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার মাইজবাগ ইউনিয়নের কুমারুলী-ঝালুয়া সড়কের দত্তগ্রাম মৌজার মৌলভী বাড়ি হতে বলদা বিল পর্যন্ত রাস্তা মেরামতের জন্য সরকারিভাবে দেড় লাখ টাকার বরাদ্দ আসে।
এতে রাস্তার কাজ শুরু করতে নজরুলের বসবাসের একমাত্র ঘরটি ভেঙে ফেলার আবেদন করে স্থানীয় একটি মহল। সে অনুযায়ী গত ১৩ এপ্রিল প্রতিবন্ধী নজরুলের ঘর উচ্ছেদ করতে যায় প্রশাসন। এতে বাধা দেয় এলাকাবাসী।
স্থানীয়দের অভিযোগ,'প্রতিবন্ধী নজরুলের ঘরটি না ভেঙেও রাস্তা মেরামতের কাজ করা সম্ভব। ঘরের পাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে স্থানীয় দোলোয়ার হোসেন নামে এক ঢাবি শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের লোকজন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য প্রশাসনের মাধ্যমে ঘরটি ভাঙাতে চায়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন,"রাস্তাটি এলাকার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়, তবে ঘর ভেঙে না দিয়ে পাশ দিয়ে বিকল্পভাবে রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব। কিন্তু কিছু লোকজন ব্যক্তিগত বিরোধের কারণে ঘর ভেঙে রাস্তা করতে চাইছেন।" তিনি আরও বলেন,"সরকার প্রতিবন্ধীদের জন্য ভাতা,পূনর্বাসনসহ বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে আসছে। তাহলে এই অসহায় মানুষটির এতটুকু আশ্রয় কী রাষ্ট্র দিতে পারে না? বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় দেখা দরকার।"
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ঘরটি ভেঙ্গে ফেললে আমরা স্বামী স্ত্রী থাকবো কোথায় যাবো কই? এ ভিটে মাটি ছাড়া আমার আর তো কিছুই নেই।
এ প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কেন্দ্রীয় ভলেন্টিয়ার কমিটির সদস্য হিসেবে পরিচয়দানকারী দেলোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন,'জুলাই আন্দোলনে আমি ভলেন্টিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এলাকার সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের দাবির প্রেক্ষিতে আমি তদবির করে রাস্তা মেরামতের জন্য বরাদ্দ এনেছি। এখানে আমার ব্যক্তিগত কোনো স্বার্থ নেই, প্রতিবন্ধীর ঘর না ভাঙলে রাস্তাটি করা যাবে না। ঘরটি সরকারি জায়গাতে, তাই বাধ্য হয়ে এলাকার স্বার্থে ঘরটি ভাঙতে হচ্ছে।
কিন্তু এখানে তৃতীয় পক্ষ প্রতিবেশী মাজহারুল, আঃ সাত্তার, আব্দুল হাই ও তার ছেলে হেলাল ব্যক্তি স্বার্থে প্রতিবন্ধীকে ব্যবহার করে রাস্তার কাজে বাঁধা দিচ্ছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে মাজহারুল ইসলাম বলেন-দেলোয়ার এসব বানিয়ে মিথ্যাচার করছে আমাদের ওপর।
প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নূরুল আমিন গণমাধ্যমকে বলেন, এলাকাবাসীর জন্য রাস্তাটি খুবই প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী নজরুলের ঘরটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু একটি পক্ষ এতে বাধা দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃএরশাদুল আহমেদ বলেন,'এবিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এসিল্যান্ডকে বিষয়টি খতিয়ে দেখে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর