
জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের আলোচনা অনুষ্ঠানে আওয়ামী পন্থি 'সম্প্রীতি বাংলাদেশ' মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহবায়ক অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফের উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সুশীল শ্রেণীর আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দকে বিএনপি নেতারা দলে ভেড়াচ্ছেন এমন অভিযোগ করে নিন্দা জানিয়েছেন জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।
রবিবার (২০ এপ্রিল) বিকালে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল কনফারেন্স রুমে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে জাতীয়তাবাদী চেতনায় বিশ্বাসী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের ব্যানারে কিভাবে হাসপাতাল সভা কক্ষে এই রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতে পারে। যা প্রশাসনিক আইন বহির্ভূত।
ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. জিয়াউর রহমানের সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন ড্যাব জেলা কমিটির সভাপতি ডা. বদরুল আলম চৌধুরী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য গোলাম আবেদীন কায়সার, বেগম জরিনা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল করিম পিয়ারা, অধ্যাপক মিজানুর রহমান, জেলা জাসাসের সাধারণ সম্পাদক শামীম বিশ্বাস, সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা হাফিজ উদ্দিন, মডেল হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নুরু মিয়া, কেল্লাই উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান সহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
সম্প্রীতি বাংলাদেশ মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক মো. আব্দুর রউফ সদর উপজেলার খান বাহাদুর কলেজের অধ্যক্ষ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পৃষ্ঠপোষকতায় ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি মানিকগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমিতে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এক আলোচনা সভায় যোগ দেন। পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি তৎকালীন আলেমসমাজ প্রত্যাখ্যান করে এবং মানিকগঞ্জে সম্প্রীতির বাংলাদেশ নামক কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে।
পিযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় এক বক্তৃতায় দাঁড়ি রাখা, বেশি বেশি ধর্ম প্রচার করা, টাখনুর উপরে কাপড় পড়া, বেশি কথা না বলা ইত্যাদিকে জঙ্গিবাদের পূর্বলক্ষণ হিসেবে আখ্যা দেন। তাঁর এই বক্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদে পীযূষ বন্দোপাধ্যায়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ ও তাওহিদি জনতা।
সম্প্রীতির বাংলাদেশ এবং পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৈরি করা বয়ান ছড়িয়ে দিতেই জেলা কমিটিগুলো থেকে তৎপরতা চালানো হয়। তখন থেকেই দেশব্যাপী ঘৃণিত হয় পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় ও তার সম্প্রীতির বাংলাদেশ।
এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রীতির বাংলাদেশ মানিকগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ও অধ্যক্ষ আবদুর রউফ বলেন, 'আমি কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম না। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম জোরপূর্বক 'সম্প্রীতির বাংলাদেশ'-এই কমিটিতে আমাকে রাখে। তখন আমি প্রোগ্রামে পার্টিসিপেট করি তাছাড়া তখন আমার কাছে কোন পথ ছিল না। গতকাল জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের আলোচনায় জেলা ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়া ভাই আমাকে ইনভাইট করলে আমি সে অনুষ্ঠানে যোগ দেই।'
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণের বিষয়টি অস্বীকার করে ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, 'খান বাবুর আওলাদ হোসেন খান কলেজের শিক্ষক দোলন চাঁপা আমাদের জাতীয়তাবাদী পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের আলোচনায় সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন। মূলত তার আমন্ত্রণেই অধ্যক্ষ মো. আবদুর রউফ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভা চলাকালে আমরা বিষয়টা নোটিশ করলে আবদুর রউফকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন বলে জানান। এরপর আমরা সঞ্চালক দোলন চাঁপাকে সতর্ক এবং অধ্যক্ষ আবদুর রউফকে পরবর্তী কর্মকাণ্ডে না জড়ানোর জন্য জনাই।'
হাসপাতাল সভাকক্ষে কিভাবে এই রাজনৈতিক সভা করা হলো এ বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ড্যাব মানিকগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, 'হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অনুমতি সাপেক্ষে সভাকক্ষে অনুষ্ঠানটি করা হয়েছে। তবে আমার আরো সচেতন হওয়া দরকার ছিল। সামনে এরকম কিছু আর হবে না।'
এ সকল বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, 'এ ধরনের ভুঁইফোড় সংগঠন বিএনপি সমর্থন করে না। এই সংগঠনগুলোর মাধ্যমেই আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এ বিষয়ে আমরা জেলা বিএনপির আহবায়ক আফরোজা খান রিতার সাথে আলোচনা করব পাশাপাশি দলের হাই কমান্ডকে বিষয়টা অবগত করা হবে। হাই কমান্ডের নির্দেশনা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।'
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর