
বাংলাদেশের সীমান্তের ১০ কিলোমিটার ভেতরে বান্দরবান জেলার থানচি উপজেলার রেমাক্রী এলাকায় অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে প্রকাশ্যে জলকেলি উৎসব করেছে মিয়ানমারের বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল মারমা জনগোষ্ঠী জলকেলি উৎসবের আয়োজন করে। যার সম্পূর্ণ পৃষ্ঠপোষকতা আরাকান আর্মি করে বলে জানা গেছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব পেজে আরাকান আর্মি জলকেলি উৎসব শেয়ার করে। যা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দেওয়া তথ্যমতে, উৎসবে বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য, রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।
এই উৎসবে আরাকান আর্মির ইউএলএ কমান্ডার লাভ্রের (স্থানীয় নাম কুখাই রাখাইন) ইউএলএ লিডার মংথুইহ্লা মারমা, আরাকান আর্মির সক্রিয় সদস্য, লেফটেন্যান্ট জোকা, ক্যাপ্টেন ক্যজো রাখাইন, ক্যাপ্টেন ভোলং রাখাইন প্রমুখ এর উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া আরাকান আর্মির প্রায় শতাধিক সদস্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বান্দরবান জেলা পরিষদ সদস্য খামলাই ম্রো, মুইশৈইথুই মারমা রনি, ২নং তিন্দু ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মংপ্রু মারমা, জেএসএস যুব সমিতির সভাপতি ও মারমা প্রতিনিধি, থানচি উপজেলা, নুমংপ্রু মারমা, মেম্বার ৩নং ওয়ার্ড, রেমাক্রি ইউনিয়ন হ্লা থোয়াই প্রু উপস্থিত ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় সূত্র।
বান্দরবানের থানচির রেমাক্রি মুখ এলাকায় মিয়ানমারের সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ও তাদের রাজনৈতিক শাখা ইউএলএর অর্থায়ন ও তত্ত্বাবধানে আরাকান ওয়াটার ফেস্টিভাল নামে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে প্রায় ১০ কি.মি. অভ্যন্তরে এ ধরনের আয়োজনকে সরাসরি সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনের দৃষ্টান্ত হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
উৎসবে আরাকান আর্মির ইউনিফর্মধারী ও অস্ত্রধারী সদস্যরা প্রকাশ্যে অংশ নেন এবং মঞ্চে পারফর্ম করেন। মঞ্চ ও আশপাশজুড়ে ছিল রাখাইনের ইউএলএ ও আরাকান আর্মির পতাকা ও প্রতীক।
বাংলাদেশি মারমা ও অন্যান্য স্থানীয় পাহাড়ি সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতি এবং বক্তব্য ছিল আয়োজনের অংশ।
এ বিষয়ে বিজিবি সেক্টর কমান্ডার (বান্দরবান) লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান বলেন, লোকেশনটি সীমান্ত থেকে ১০ কিলোমিটারের ভেতরে এবং এই উৎসবটি প্রতি বছরই হয়।
তিনি বলেন, আমাদের যেহেতু দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অন্য কোনো বাহিনী নাই, বিজিবি সেখানে নিরাপত্তাজনিত কোনো ঘটনা না ঘটে সেদিকে গুরুত্ব দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি একটি উৎসব, এই পরিস্থিতিতে কোনো কিছু করাটা স্পর্শকাতর বিষয়। উৎসব স্থলে যেন বিশৃঙ্খলা না ঘটে, কেউ অবৈধ অস্ত্র নিয়ে অনুপ্রবেশ করতে না পারে আমরা সেই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছি। বিজিবি সেখানে গিয়েছে তাদের দায়িত্ব পালনের জন্য—এটা বিজিবির নিষ্ক্রিয়তা না।
পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে সেক্টর কমান্ডার বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছি, এর প্রেক্ষিতে টহল জোরদার করা হয়েছে।
বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ কাওছার বলেন, আরাকানরা বান্দরবানে বৈসাবি অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে—এমন একটি তথ্য আমরা জানতে পেরেছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের গোয়েন্দারা কাজ করছে
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর