
সামাজিক মাধ্যম ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুরে জেলার আহ্বায়ক মীর ইছহাক হোসেন ইখলাস। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাত সোয়া ৯টার দিকে নিজের ফেসবুক লাইভে এসে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চান তিনি।
লাইভে মীর ইছহাক হোসেন ইখলাস বলেন, দীর্ঘ ২৬ দিনের আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমি কাজ করে গেছি। দেশের স্বার্থে দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট সরকারকে রক্তাক্ত আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা পতন করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আজকে ৫ আগস্টের ৮ মাস পর আসামিরা আমার বাড়িতে রাতের গভীর রাতে হামলা করতে আসছে।
তিনি আরও বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জামালপুর সদর উপজেলার ৪নং মেস্টা ইউনিয়ন পরিষদের নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা বদরুল হাসান বিদ্যুৎকে দায়ী করে ইখলাস বলেন, বিদ্যুতের বাবা, চাচা ও তার চাচাতো ভাই যারা আছে তারা সবাই আমার বাড়িতে হামলা করতে আসছে। সমন্বয়কদের লাশ রাখবে, না গুম করবে; এই জাতীয় হুমকি দিচ্ছে।
ইখলাস বলেন, আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হওয়া সত্ত্বেও আমার সঙ্গে এ রকম আচরণের পরও প্রশাসনের টনক নড়ে না? স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা আমাদের জীবনকে ফাঁসির মঞ্চে রেখে কেন আজকে তাদের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে বারবার নিষিদ্ধ করার দাবির পরও কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে না।
ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা বলেন, আজকে আমার বাড়িতে হামলা করার জন্য চক্রান্ত চালাইছে। হামলা করার জন্য পুরোপুরি প্ল্যান ছিল, পরবর্তীতে তারা হামলা চালাতে পারে নাই। তারা এখনো আত্মগোপনে থেকে আমাদের হুমকি দিচ্ছে, আমাদের রাখবে না, আমাদের এলাকায় থাকতে দিবে না।
তিনি বলেন, তাদের কত বড় সাহস আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো আমাদের ওপর হামলা চালাইতে আসে, আমার বাবা-মায়ের ওপর হামলা চালাইতে আসে। আমার বাবা-মা গ্রামে থাকে আমার জীবন ও পরিবারের জীবন সংকটাপন্ন।
বিদ্যুৎকে কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না প্রশ্ন রেখে আহ্বায়ক ইখলাস বলেন, পুলিশ ও সরকার কত টাকার লেনদেন করে বিদ্যুৎকে গ্রেপ্তার করছে না? কেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? এর জবাব দিতে হবে। কেন টাকা লেনদেনের বিনিময়ে আমাদের জীবনকে সংকটে ফেলছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে উদ্দেশ্য করে আহ্বায়ক ইখলাস বলেন, আপনার এই নমনীয়তার জন্য আমাদের জীবন আজ কবরের দিকে ধাবিত হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে উদ্দেশ্য করেন তিনি বলেন, আপনি বারবার সুযোগ দিচ্ছেন এই আসামিদের, আপনি সুযোগ না দিলে আমার বাড়িতে হামলা চালানোর সুযোগ পেত না।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনার পুলিশ প্রশাসন কি করে, প্রশাসন আমার ও জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। আমি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জামালপুর জেলার সর্বোচ্চ পদে থাকা সত্ত্বেও আমার বাড়িতে যদি হামলা চালানো হয়, পুলিশ প্রশাসনকে জানানো পরেও যদি তাদের টনক না নড়ে, তাহলে এই স্বাধীনতার কোনো দরকার নেই। আমরা ৫ আগস্টের আগে মৃত হয়ে গেছি, আমরা মৃত্যুবরণ করব। আমার জীবনের বিনিময়ে হলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হোক।
আসামিদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, আমার পরিবারের কিছু হলে সেই দায়ভার কে নেবে। আমি আমার পরিবারের এই সমস্যার কথা শুনে গ্রামে এসেছি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও সদস্যসচিব আখতার হোসেনকে উদ্দেশ করে তিনি, আমরা আপনাদের ডাকে রাজপথে নেমে ফ্যাসিস্ট সরকারকে উৎখাত করেছি। আন্দোলনের একজন যোদ্ধা হিসেবে আমি এবং আমার পরিবার যদি নিরাপত্তা না পায়, তাহলে এই দেশের জনগণ নিরাপত্তা পায় না। আওয়ামী সন্ত্রাসদের দ্বারা এই দেশের মানুষ হুমকির শিকার হচ্ছে। তাই আমি দ্রুত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কাছে এই বার্তা পৌঁছাতে চাই যে, কেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে না। কেন দুই দিন পর টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তাদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে? কেন কোটি কোটি টাকা দিয়ে তাদেরকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে?
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর