
বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের উপর মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ ও কর্তৃত্ববাদী আচরণের প্রতিবাদে এবং কমিশনের স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুর ১২:০০টায় ড. আনোয়ার হোসেন অডিটোরিয়াম, পরমাণু ভবন, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, ই-১২/এ, আগারগাঁও, ঢাকায় এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের বিজ্ঞানী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে বক্তারা বলেন, কমিশনের দীর্ঘদিনের স্বায়ত্তশাসন বিনষ্ট করে মন্ত্রণালয়ের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং কর্তৃত্ববাদী আচরণ চলমান রয়েছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতেই আজকের এই আয়োজন।
বক্তারা জানান, গত ৫০ বছর ধরে দেশের পরমাণু বিজ্ঞান চর্চায় বিজ্ঞানীরা নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আসছেন, যা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত এবং গৌরবজনক। কিন্তু মেধাবী বিজ্ঞানীদের গবেষণায় যুক্ত রাখা দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে বিশেষ কোনো সুবিধা না থাকা, উচ্চশিক্ষা-প্রশিক্ষণে বাধা এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাবে। ফলে অনেকেই এই পেশা ত্যাগ করে ভিন্ন পথে চলে যাচ্ছেন।
উল্লেখযোগ্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বিজ্ঞানীদের জন্য বিশেষ ভাতা চালু করা, গৃহ নির্মাণ ও গাড়ি সেবা সংক্রান্ত সুদমুক্ত ঋণ সুবিধা, আধুনিক গবেষণাগার নির্মাণ ও পর্যাপ্ত তহবিল নিশ্চিত করা, উচ্চশিক্ষা ও বৈদেশিক প্রশিক্ষণে প্রতিবন্ধকতা দূর করা, কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দিয়ে স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা।
স্বায়ত্তশাসনের সংকট ও উচ্চশিক্ষায় বাধা: বক্তারা অভিযোগ করেন, কমিশনের উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অনুমোদন এখন মন্ত্রণালয়ের হাতে যাওয়ায় যোগ্য বিজ্ঞানীরা বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বরং মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারাই বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, যা হতাশাজনক।
বেতন বৈষম্য ও পদ অবনমন: কমিশনের বিজ্ঞানীদের বেতন ও পদ মর্যাদায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সমান সুবিধা থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে তা লঙ্ঘিত হচ্ছে। বিভিন্ন পদ গ্রেড অবনমন করে সৃজন করা হয়েছে, যা প্রশাসনিক জটিলতা ও অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
iBAS++ ব্যবস্থা চাপিয়ে দেওয়া: বিশ্বের অন্যান্য পরমাণু গবেষণা সংস্থা যেখানে সংবেদনশীলতা বজায় রাখে, সেখানে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ওপর iBAS++ সিস্টেম চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সংবেদনশীল আর্থিক তথ্যের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। ফলে মার্চ ২০২৫-এর বেতন-ভাতা এখনও প্রদান করা হয়নি।
রূপপুর প্রকল্পে কমিশনের অধিকার খর্ব: রূপপুর প্রকল্পে কমিশনের মালিকানা থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তিতে কমিশনকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে, যা আইনবিরোধী ও কমিশনের অধিকার খর্বের অপচেষ্টা।
পদোন্নতির অভাব ও জনবল সংকট: কমিশনের বিস্তৃত কর্মকাণ্ডের তুলনায় পর্যাপ্ত পদ সৃষ্টি বা জনবল নিয়োগ না হওয়ায় এবং পদোন্নতির অভাবে কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
উপসংহার: কমিশনের বিজ্ঞানীরা বলেন, দেশের পরমাণু বিজ্ঞান ও গবেষণার ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হলে কমিশনের স্বায়ত্তশাসন, মর্যাদা ও পেশাদার কর্মপরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা একান্ত জরুরি। সাংবাদিকদের মাধ্যমে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এই সংবাদ সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর