
বর্ষা আসেনি, নদীতে পানির প্রবাহ কম, নেই কোনো ঢেউ—তবুও ভাঙছে মধুমতী। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন নদীতীরবর্তী মানুষ। লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর, মাকড়াইল, রামচন্দ্রপুর ও নওখোলা এলাকার বহু পরিবার ইতোমধ্যেই হারিয়েছেন তাঁদের বসতভিটা ও ফসলি জমি। ঝুঁকিতে রয়েছে ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্রিটিশ আমলের মাকড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও তিনটি স্কুল, কয়েকটি মসজিদ, আশ্রয়ণ প্রকল্প ও গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ সড়ক।
স্থানীয়রা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বালুর বস্তা দিয়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত বাঁধ কিছুটা সময় ভাঙন ঠেকালেও তা ধীরে ধীরে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অপরিকল্পিত ও ইজারা বহির্ভূত এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
কাশিপুর গ্রামের ৬৫ বছর বয়সী শামসুন্নাহার বেগম বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনে থেকে বালু তুলে এনে পেছনে স্তূপ করে রাখা হয়েছিল। সেই বালুর পানির টানে আমার বাড়ি নদীতে চলে গেছে। আমি গরিব মানুষ, জমি নেই, স্বামী নেই, ছেলে নেই—শুধু চার মেয়ে। এখন আমি যাব কোথায়?’
মাকড়াইল গ্রামের বাসিন্দা ফজলুল মৃধা বলেন, ‘আমাদের বহু জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমার ভাই বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। ব্রিটিশ আমলের স্কুলটিও এখন ঝুঁকিতে।’
নদীপাড়ের মানুষদের দাবি, শুধু বালু উত্তোলন বন্ধ করলেই হবে না, বরং ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তারা চান, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে বালুর বস্তা ফেলে অস্থায়ী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
বালু উত্তোলনের বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন ইতোমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে। লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রিয়াদ বলেন, ‘বালুমহলের ইজারা বাতিল করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে কেউ অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে নড়াইল জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অভিজিৎ কুমার সাহা জানান, ‘নিয়ম না মেনে বালু উত্তোলনের ফলে প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রশাসনের সহায়তায় বালু উত্তোলন বন্ধ করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দ্রুত সংস্কারে পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
নদী ভাঙনের ভয়াবহতায় দিশেহারা নদীপাড়ের মানুষ এখন স্থায়ী সমাধানের আশায় তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে।
সর্বশেষ খবর