
বিতর্কিত নির্বাচনে অতি উৎসাহী ভূমিকা এবং নানা অনিয়মে জড়িত থাকার অভিযোগে আরও কিছু সরকারি কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে এবং প্রমাণসাপেক্ষে ধাপে ধাপে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে বর্তমান সরকারের পতনের পর প্রশাসনের বিতর্কিত ভূমিকা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দেয়। গত ১৬ বছরের শাসনামলে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে থাকা অনেক কর্মকর্তা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিশেষ করে ২০১৪ সালের একতরফা নির্বাচন, ২০১৮ সালের ‘রাতের ভোট’ এবং ২০২৪ সালের ‘প্রতীকী নির্বাচন’-এ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। ইতোমধ্যে বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ জন জেলা প্রশাসককে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং ৪৩ জন কর্মকর্তাকে করা হয়েছে বিশেষ দায়িত্বে সংযুক্ত (ওএসডি)।
তদন্তাধীন আরও শতাধিক কর্মকর্তার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো কাজ করছে। যাঁদের ভূমিকা অতি উৎসাহী বা বিধিবহির্ভূত প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মাধ্যমে অনুসন্ধান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোখলেস উর রহমান।
ইন্ডি পেন্ডেন্ট টিভির এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে সম্পূর্ণ তালিকা পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কেবল বাধ্যতামূলক অবসর নয়, যাঁরা রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, “চাকরিচ্যুতি যথেষ্ট নয়, বিচার হওয়া দরকার—কারণ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের দায় এড়িয়ে যাওয়া যায় না।”
সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বলেন, “কেউ যদি অতি উৎসাহী হয়ে দায়িত্বের বাইরে গিয়ে কিছু করে থাকেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এদিকে, ইউএনও ও এসিল্যান্ড পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেও যাঁরা অতীতের নির্বাচনে বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের তালিকা তৈরি করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
জনসচেতন মহল বলছে, এ ধরণের উদ্যোগ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ক্ষেত্রে একটি সাহসী পদক্ষেপ। তবে, নিশ্চিত করতে হবে, নির্দোষ কেউ যেন শাস্তির আওতায় না পড়ে।
সর্বশেষ খবর