
লালমনিরহাটের তিস্তা সড়ক সেতু-১ এর তিস্তা টোল প্লাজা এলাকা পারাপারের সময় মাত্র ১০ টাকা টোল দেওয়াকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের সাথে টোল আদায় কারী গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
এতে টোলপ্লাজা কর্তৃপক্ষের তিনজনসহ মোট চারজন আহত হয়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপি'র যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজার রহমান রাজুসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ এবং ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত করে একটি মামলাটি দায়ের করেন তিস্তা টোল প্লাজার ইজারাদারের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা নাজমুল আলম।
এর আগে, বুধবার রাতে লালমনিরহাট রংপুর মহাসড়কের সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের তিস্তা সড়ক সেতু টোলপ্লাজায় এ ঘটনা ঘটে। বিএনপি নেতা রাজু সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং ইউনিয়নের মোস্তাফি এলাকার সামাদ ব্যাপারীর ছেলে।
থানায় দায়েরকৃত এজাহারে উল্লেখ করা হয়, লালমনিরহাট- রংপুর মহাসড়কে সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তা নদীর উপর নির্মিত হয় তিস্তা সড়ক সেতু। লালমনিরহাট সড়ক ও জনপদ থেকে সেতুটির টোল আদায়ের ইজারা গ্রহণ করেন রানা কনস্ট্রাকশন নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সেতুর ইজারাদার প্রতিষ্ঠান রানা কনস্ট্রাকশনের অংশীদার হিসেবে টোল আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল নাজু। সেতু পারাপারে মোটর সাইকেল প্রতি ১০ টাকা টোল আদায় করা হয়। সেতুটির টোলের ইজারাদার নিয়োগের সময় স্থানীয় বিএনপি ও রংপুর বিএনপি'র মাঝে মতবিরোধ দেখা দেয়।
বুধবার বিকেলে কয়েকটি মোটরসাইকেল নিয়ে তিস্তা সড়ক সেতু পাড় হচ্ছিলেন গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপি'র যুগ্ম সম্পাদক মাহফুজার রহমান রাজু। এ সময় টোল না দিয়ে টোলপ্লাজা অতিক্রমের চেষ্টা করলে আদায়কারীরা সংকেত দিয়ে গাড়িগুলো থামিয়ে দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে টোল আদায়ের কর্মচারীদের সাথে বিতর্ক করেন রাজু। একপর্যায়ে টোল না দিয়ে রাজু ও তার লোকজন চলে যায়।
এ বিতর্কের জেরে ওই দিন রাতে রাজু দলবল নিয়ে টোলপ্লাজয় হামলা চালিয়ে টোল প্লাজার অফিসকক্ষ ভাঙচুর করে। এ সময় টোল ক্যাশে থাকা ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। তাদের ভয়ে টোল কর্মচারীরা ক্যাশ ঘরে আত্মরক্ষা করলে সেখানেও হামলা চালিয়ে ৮ লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। এতে তাদের হামলায় ম্যানেজার সুরুজ্জামান, টোল কর্মচারী জুয়েল ও মোখলেস উদ্দিন রক্তাক্ত জখম হন। পরে স্থানীয়রা ছুটে এসে আহতদের উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।
সেতুর ইজারাদারি প্রতিষ্ঠান রানা কনস্ট্রাকশনের অংশীদার রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল নাজু অভিযোগ করে বলেন, রাজুর নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে টোল কর্মচারীদের মারধর ও ১৪ লাখ টাকা লুট করা হয়েছে। রাজুদের হামলায় আমাদের টোলপ্লাজার ম্যানেজার সুরুজ্জামান, কর্মচারী জুয়েল, মোকলেশ আহত হয়েছে। এরমধ্যে একজনের অবস্থা আশংকাজনক। তবে অভিযুক্ত মাহফুজার রহমান রাজু এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা আমাদেরকে মামলায় ফাঁসাতে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের নাটক তৈরি করেছে। তিনি সঠিক তদন্ত দাবি করেন।
এছাড়া গতকাল টোলপ্লাজাএলাকা তিনি তিস্তা নদী তীরবর্তী একটি পার্কে যাচ্ছিলেন কিন্তু সেতু পার হতেন না বলে দাবি করেন। রাজু বলেন, যেহেতু সেতু পার হবো তাই টোল দিবো না। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটি ও ধাক্কাধাক্কি হয়েছে। এতে আমাদেরও দুজন আহত হয়েছে। এঘটনায় রাতেই পুলিশকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, গতকাল ওই স্থানে দ্বায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট সদর থানার এসআই দ্বায়িত্বে অবহেলা করেছেন বলে অভিযোগ করেন টোলপ্লাজার কর্মচারী ও কর্মকর্তারা। পুলিশ আহতদের রক্ত পানি দিয়ে ধুয়ে দিয়েছে বলেও সাংবাদিকদের নিকট অভিযোগ করেন সেতুর ইজারাদারি প্রতিষ্ঠান রানা কনস্ট্রাকশনের অংশীদার রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল নাজু।
অপরদিকে, এসআই মো. রওশন জানান, অল্প সময়ের মধ্যে দুই পক্ষ মারামারি করে একপক্ষ দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পুলিশ কোনো আলামত নষ্ট করেনি। সিসি টিভির ফুটেজে সঠিক প্রমাণ পাওয়া যাবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী বলেন, গতকালের ঘটনায় টোলপ্লাজা কর্তৃপক্ষের পক্ষে নাজমুল আলম একটি অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগটিকে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে।
মুনতাসির/সাএ
সর্বশেষ খবর