
ভালোবাসার নামে সহিংসতা, অ্যাকশনের নামে দুর্বল চিত্রনাট্য—‘বরবাদ’ যেন এক রঙিন খাঁচায় বন্দি পাখির গান; যার সুর আছে, প্রাণ নেই।
শুরুটা যেন এক কবিতার মতো:
রঙে রঙে ছাওয়া ফ্রেম,
তবু গল্পে নেই রোদের দ্যুতি,
শাকিব খান ‘দানব’ হয়ে এলেন,
গল্প রইল শুধুই ক্ষণিকের সুখস্মৃতি।
‘তুফান’-এর পর ‘বরবাদ’ ছিল ঢালিউডপ্রেমীদের কাছে এক বড় প্রত্যাশার নাম। বড় বাজেট, ঝকঝকে লোকেশন, দুর্দান্ত সিনেমাটোগ্রাফি, ফ্যাশনেবল লুক—দেখে মাঝে মাঝে মনে হতে পারে, কোনো আন্তর্জাতিক অ্যাকশন সিনেমা দেখছি! ভিজুয়াল ও প্রোডাকশন ডিজাইনে নিখুঁত পরিশ্রম স্পষ্ট।
তবে সেই চোখধাঁধানো আবরণের নিচে লুকিয়ে আছে এক ফাঁপা গল্প—যা বরবাদ করেছে সময়, আবেগ আর ঈদের আনন্দ।
বড় আয়োজন, ছোট গল্প
শাকিব খান অভিনীত আরিয়ান মির্জা চরিত্রটি—এক বিষাক্ত নায়কের রূপ। প্রেমে জোর-জবরদস্তি, প্রতিশোধে হিংস্রতা—সবকিছু মিশিয়ে তৈরি এক ঝলমলে প্যাকেজ। যদিও শাকিব খান তাঁর অভিনয়ে দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন, তবে দুর্বল গল্প দর্শকের সহানুভূতি ধরে রাখতে পারেনি।
প্রথমার্ধ যতটা সিনেম্যাটিক ও আকর্ষণীয়, দ্বিতীয়ার্ধে গল্প যেন তাড়াহুড়ো করে সাজানো। টুইস্ট আসে হুট করে, ফ্ল্যাশব্যাক চলে আসে যেন হুট করেই—দেখতে দেখতে মনে হয়, গল্প বলার চেয়ে দৃশ্য দেখানোই ছিল মূল উদ্দেশ্য।
কলকাতার উচ্চারণ, ঢাকার সিনেমা?
সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো দিক হলো সংলাপে উচ্চারণ সমস্যা। ইধিকা পাল ও রিয়া গাঙ্গুলি চক্রবর্তীর সংলাপে কলকাতার টান এতটাই প্রকট, যে সময় সময় বোঝাই যায় না, এটি ঢাকাই সিনেমা না টলিউডের ডাবিং প্রজেক্ট।
স্যাম ভট্টাচার্যের 'জিল্লু, মাল দে' সংলাপ ভাইরাল হলেও তাঁর কথায় দেশি অনুভূতি হারিয়ে গেছে। যখন দর্শক ভাষাগত বাধার সম্মুখীন হন, তখন গল্পে মন ডুবিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
পারফরম্যান্স: শাকিব দুর্দান্ত, যীশুর অপচয়
আরিয়ান চরিত্রে শাকিব খানের দুই রূপই চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে—প্রথমদিকে রাগী, বখে যাওয়া যুবক, পরে প্রেমিক ও প্রতিশোধপরায়ণ তরুণ।
তবে তাঁর মূল প্রতিপক্ষ হিসেবে যীশু সেনগুপ্তের উপস্থিতি হতাশ করেছে। এমন শক্তিশালী অভিনেতাকে দুর্বল চিত্রনাট্যে অপচয় করা সত্যিই দুঃখজনক।
গান ও গ্ল্যামার: চোখের আরাম, কানে ‘বিপ বিপ’
'মায়াবী' ও 'মহামায়া' গান দুটি সত্যিই মুগ্ধ করেছে। তবে সহিংস দৃশ্য ও কিছু সংলাপে অতিরিক্ত সেন্সর শব্দ ('বিপ বিপ') দর্শকের মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়, যা বিরক্তিকর হয়ে ওঠে।
অনুভবের শেষপ্রান্তে
‘বরবাদ’ এমন এক সিনেমা, যা চোখের আরাম দিলেও হৃদয়ে দাগ কাটে না। সিনেমা শেষে মনে হয়—লোকেশন দারুণ, গান সুন্দর, অ্যাকশন দুর্দান্ত—কিন্তু গল্প?
কিছুই যেন হাতে ধরে ফেরে না দর্শক। রয়ে যায় একরাশ অপূর্ণতার গ্লানি।
‘বরবাদ’ শুধু নামেই নয়, এটি সময়েরও এক নিদারুণ বরবাদ। ঢাকাই সিনেমার সম্ভাবনাময় অধ্যায় চোখের সামনে এসেও গল্পের কাছে পরাজিত হলো।
শাকিব খান, পরিচালক মেহেদী হাসান এবং পুরো টিম হয়তো আরও বড় কিছু উপহার দিতে পারতেন—যদি ভিজুয়ালের পাশাপাশি গল্পের দিকেও সমান মনোযোগ দিতেন।
সর্বশেষ খবর