চুয়াডাঙ্গায় শুরু হয়েছে বোরো মৌসুমের ধান কাটা। এবার ভালো ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা। তবে এবারও দেখা দিয়েছে শ্রমিক সংকট ও কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধিতে অনেক সমস্যা সম্মুখীন হতে হয়েছে কৃষকদের।
তপ্ত রোদের ভ্যাপসা গরমে কৃষক তার সোনার ফসল ঘরে তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছে। এবার আবহাওয়ার অনুকূল পরিবেশ থাকায় ধানে তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই কৃষক মনের আনন্দে ধান কাটা ও মাড়াই কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে। পোকামাকড়ের আক্রমণ না হওয়ায় ধানের ফলনে খুশি কৃষক। আগামীতে ধান চাষাবাদ আরও বাড়বে বলে মনে করেন কৃষিবিভাগ।
মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, কৃষক আবু তালেব। বয়স ৬৫ ছুঁই ছুঁই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই বৃদ্ধ কৃষক তপ্ত রোদ উপেক্ষা করে ধান বাঁধার কাজ করছে। অনেকটা মনের আনন্দে তাঁর ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে ঘরে তুলবে। ফলন ভালো ধানের দামও ভালো।
এবারের আবহাওয়া অনুকূল পরিবেশে থাকাতে ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। তাই বিঘায় খরচের হিসাব নিকাশে ধানের দামে অঙ্কটা মিলবে বলে মনে করেন এই বৃদ্ধ কৃষক আবু তালেব। এই কৃষকের মতো এবার সব কৃষকদের বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
কৃষকরা জানায়, গতবারের মৌসুমের মতো এবারও বোরো ধান কাটায় শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট মুহূর্তে শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি খরচ বেশি। প্রতি মজুরি খরচে ১০০ টাকা বেড়ে ৫০০ টাকা। যা কৃষকদের অনেক খরচ পড়ে যাচ্ছে। একদিকে কৃষি উপকরণের দাম বৃদ্ধি।
অপরদিকে শ্রমিকের মূল্য বৃদ্ধি। তাই এক বিঘা জমিতে এবার ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। যা প্রতি বিঘায় ধান হবে ২২ থেকে ২৪ মণ। আর ধানের মণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকায়। ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকদের বোরো আবাদে খুশি প্রকাশ দেখা গিয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৩৫ হাজার ৭৩২ হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করা হয়েছে। আর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৬ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে। এই পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে ১০ শতাংশ। কিছু দিনের মধ্যে ধান সব ঘরে তুলবে কৃষক। মাঠজুড়ে কৃষকদের ধানকাটার তোড়জোড় চলছে পুরোদমে।
কথা হলে সদর উপজেলা বেলগাছি গ্রামের কৃষক আবু তালেব বলেন, ‘আবহাওয়া এখন ভালো। বৃষ্টি হওয়ার আগেই ধান ঘরে তুলতে তোড়জোড় শুরু করেছি। এবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় ধানের ভালো ফলন হয়েছে। আবার ধানের ভালো দাম পাব আসা করি। তবে প্রচণ্ড রোদের তাপমাত্রা। এবার ভালো বীজ হয়েছে আবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এবার ধানে কোন পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি’।
আরেক কৃষক আমজাদুল ইসলাম বলেন, ‘এবার ধান কাটায় শ্রমিক সংকট। আবার মজুরি খরচের পরিমাণ বেশি। তাছাড়া ধানের দাম ঠিক আছে এবার। ভালো ফলন হওয়ায় ধানের বিঘাতে এবার মণ বেশি হচ্ছে। আবার সার তেল ও সেচ খরচও বেশি। তাই এবার বিঘায় খরচ বেড়েছে ধান উৎপাদনে। ধানের মণ বিঘায় এবার ২ মণ বেশি ফলন হয়েছে’।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান সরকার বলেন, ‘এবার বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। ফলে কৃষক এবার অনেক খুশি। ধানের দামও বেশি। আরও বাড়তে পারে বাজারদর ভালো থাকলে। পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন না থাকায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
তবে এবারও শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। পুরোদমে ধান কাটা শুরু হলে শ্রমিক সংকট কেটে যাবে আশা করি। ধান চাষাবাদ বাড়ানোর জন্য কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে’।
সর্বশেষ খবর