
শিল্পাঞ্চল সাভারে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে পরিকল্পনামাফিক বাঁশঝাড়ে নিয়ে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক ও পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তানিয়াকে হত্যা করে দ্বিতীয় স্বামী সোহাগ মোল্লা(৩৫)।
রবিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে সাভার মডেল থানায় এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহীনুর কবির। এর আগে শনিবার গভীর রাতে সোহাগকে আশুলিয়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ মোল্লা (৩৫) নওগাঁ জেলার সদর থানার খিদিরপুর গ্রামের বাসের আলী মোল্লার ছেলে। অন্যদিকে হত্যার শিকার তানিয়া আক্তার (২৪) নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার পৌরসভার মিরকা নগর (আধনগর) ৯ নম্বর ওয়ার্ড এর নুরুল হকের মেয়ে। তারা দুজন আশুলিয়ায় ভাড়া থেকে স্থানীয় এএনএস নামক তৈরি পোশাক কারখানায় চাকরিরত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
জানা যায়, পরকীয়া সম্পর্কের জেরে প্রথম স্বামীকে ছেড়ে সোহাগকে বিয়ে করেছিলেন পোশাক শ্রমিক তানিয়া আক্তার (২৪)। বিয়ের পর দ্বিতীয় স্বামী সন্তান নিতে অস্বীকৃতি জানাতেই শুরু হয় বিপত্তি। পরে তানিয়া অন্তঃসত্ত্বা হয়েছেন এই খবরেই তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন সোহাগ। পরিকল্পনামাফিক বাঁশঝাড়ে নিয়ে প্রথমে শারীরিক সম্পর্ক ও পরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে তানিয়াকে হত্যা করেন তিনি। সোহাগকে গ্রেপ্তারের পর বেরিয়ে আসে তানিয়ার নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের রহস্য।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর কবির জানান, নারী শ্রমিক তানিয়া আক্তার নিজের প্রথম স্বামী ও সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। একই কারখানায় কাজ করার সুবাদে সোহাগ মোল্লার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে গত বছর তারা বিয়ে করে একসঙ্গে বসবাস করছিলেন। সোহাগ মোল্লারও প্রথম স্ত্রী আছে, তানিয়া আক্তার তার দ্বিতীয় স্ত্রী। সম্প্রতি তানিয়া আক্তার গর্ভবতী হলে বিষয়টি নিয়ে সোহাগের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রীর বাকবিতণ্ডা হয়। পরে সোহাগ দ্বিতীয় স্ত্রী তানিয়া আক্তারকে পরকীয়ার অপবাদ দিয়ে ঝগড়া করেন। এরপর গত ২৩ তারিখ রাত আটটার দিকে তানিয়াকে বেড়াতে যাওয়ার কথা বলে বিরুলিয়া ইউনিয়নের কালিয়াকৈর এলাকায় নিয়ে যান সোহাগ। সেখানে গোল্ডস্টার নামক তৈরি পোশাক কারখানার পেছনে বাঁশঝাড়ের ভেতরে তানিয়া আক্তারের সঙ্গে সহবাস করার সময় গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
পরে তানিয়ার ওড়না গলায় পেঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে নগ্ন অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যান। পরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ওই নারীর অর্ধগলিত লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিহতের স্বামী সোহাগ মোল্লাকে শনিবার রাতে আশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত সোহাগ মোল্লা ধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় নিহত তানিয়ার বাবা নুরুল হক বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
তিনি আরও জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন স্থানের সিসিটিভির ফুটেজ, আলামত সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার কথা স্বীকার করেন সোহাগ। নিহত ব্যক্তির বাবার করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সোহাগকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর