
সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। কোথাও কোথাও কাদা জমে আছে। প্রথম দেখায় মনেই হয় না এটি সড়ক। এসব স্থানে ভারী যানবাহন চলতে গিয়ে বিকল হচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। সড়কটির বেহাল হওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পাঁচ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
যাত্রী ভর্তি অটো রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিলেন রায়হান। সড়কে খানা-খন্দ দেখে খুব সাবধানে চালিয়ে আসার পরও গর্তের কাদায় আটকে পড়ে অটোরিকশাটি। ঠেলে অটো রিকশাটি গর্ত থেকে তুললেও পুরো সড়কজুড়ে এমন একাধিক গর্তের কারণে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাকে।
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সতাল এলাকায় এসে রায়হানের মতো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্রাক, কার-মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের। বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কাদা-পানিতে পুরো সড়ক যেন চাষযোগ্য জমিতে পরিণত হয়। তারপরও কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ, নিকলী, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও তাড়াইল যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ায় দুর্ভোগ মাথায় নিয়েই প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহন চলাচল করছে।
কিশোরগঞ্জ শহর থেকে করিমগঞ্জ, নিকলী, তাড়াইল, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম যাওয়ার এ সড়কটি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ। কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতাল, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, নার্সিং ইনস্টিটিউট, গুরুদয়াল সরকারি কলেজ, ওয়ালী নেওয়াজ খান কলেজ, জেলা প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস, বক্ষব্যাধি হাসপাতাল, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, সরযূ বালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম পৌর মহিলা কলেজ, কিশোরগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, কোর্ট কাচারিসহ একাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যাতায়াতের অন্যতম সড়ক এটি। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষকে বিভিন্ন কাজে চলাচল করতে হয় এ সড়ক দিয়ে।
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের সতাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সতাল নুরানি মাদ্রাসা থেকে সতাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পর্যন্ত সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে, সৃষ্টি হয়েছে খানা-খন্দ। এসব খানা-খন্দ কোথাও কোথাও বিশাল গর্তে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টির পানিতে গর্তগুলো ভরে গেছে, রয়েছে কাঁদাও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যানবাহন চলছে এ সড়কে।
সতাল এলাকার বাসিন্দা রেজাউল ইসলাম বলেন, এই সড়ক বেহাল অনেক দিন ধরেই। সড়কের কোথাও খানাখন্দ আবার কোথাও ঢিবির মতো উঁচু-নিচু। সড়কটি একেবারেই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
কথা হয় ট্রাকচালক হবি মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, প্রায় বহুদিন ধরেই এ সড়কটির বেহাল অবস্থা। অনেক ঝুঁকি নিয়ে এ সড়ক দিয়ে চলতে হচ্ছে। মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার কবলে পড়তে হচ্ছে।
ইজিবাইক চালক আওয়াল, অটোরিকশা চালক হাবিবুল, রিকশাচালক জয়নাল, করিমসহ চালক ও যাত্রীরা সড়কের এমন অবস্থায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
তারা বলেন, যেখানে সরকার সারাদেশের সড়কের ব্যাপক উন্নয়ন করেছে, সেখানে কিশোরগঞ্জ- করিমগঞ্জ সড়ক ব্যতিক্রম।
কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কের পাশে সতাল এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ী কায়সার আহমেদ আরমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সড়কটির বেহাল অবস্থা গত দুই সপ্তাহ আগে বৃষ্টি হয়েছিল। তখন থেকে প্রতিদিনই সড়কের ভাঙা গর্তে পড়ে অটোরিকশা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে।
আরো অনেক যানবাহন চালকরা জানান, খারাপ রাস্তার কারণে দ্রুত নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যানবাহন। ঘটছে হরহামেশা দুর্ঘটনা। দ্রুত এ সড়ক সংস্কার না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তারা।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কটি মূলত সড়ক ও জনপথের। পৌরসভা কর্তৃক ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিশোরগঞ্জ পৌরসভা করেছে। সড়কটি সড়ক ও জনপথে হলেও আমরা কিভাবে যানবাহন সুন্দরভাবে চলতে পারে এ ব্যাপারে একটি টিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সরেজমিনে দেখে আমাদের কাছে প্রতিবেদন দিলে আমরা চেষ্টা করবো কাজটি সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে সম্পন্ন করার জন্য।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, সড়কটির যে যে স্থানে বৃষ্টির কারণে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে সেসব স্থানে আপাতত: পানি সরিয়ে রিপায়ারিং করার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর কিশোরগঞ্জ-করিমগঞ্জ সড়কের কাজ সম্পন্ন করার জন্য অধিগ্রহণের অর্থ আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে দিয়ে দিয়েছি। সড়কের স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার জন্য কিছু দিনের মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এ ব্যাপারে নোটিশ জারি করবেন। সড়কের স্থাপনা সরিয়ে নিলেই আমরা সাথে সাথেই এ সড়কটি প্রকল্পের প্রশস্ত-করণের কাজ শিগগিরই শুরু করবো।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর