
ঢাকার কেরানীগঞ্জে গত শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে আগানগর নাগর মহল এলাকায় আসমা গার্ডেন সিটির সামনে একটি বস্তার ভিতর থেকে অজ্ঞাত এক নারীর লাশের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এরপর রবিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জের মিরেববাগ এলাকার বিপরীতে আরশিনগেট নৌকা ঘাটের পাশে বুড়িগঙ্গা নদীর পাড় থেকে মানুষের হাত পায়ের কাঁটা টুকরো উদ্ধার করে সদরঘাট নৌ থানা পুলিশ।
এছাড়াও একই দিন রাতে হাসনাবাদ নৌ পুলিশ আরো কিছু মানুষের শরীরের কাটা টুকরো উদ্ধার করে। এ নিয়ে দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ তদন্তের এক পর্যায়ে লাশের বস্তার ভেতর একটি মোবাইল রিচার্জের কার্ডের সূত্র ধরে ঘটনায় জড়িত শিমুল নামে এক যুবককে রাজধানীর শ্যামপুর থেকে গ্রেফতার করে। পরবর্তীতে গ্রেফতার শিমুলকে নিয়ে রাতেই অভিযান পরিচালনা করে তেঘরিয়া ইউনিয়নের বেয়ারা বাজার এলাকার মহিউদ্দিনের বাড়ির রাস্তার পাশের ঝোপের ভিতর থেকে আরো এক শিশুর বস্তাবন্দি মৃতদেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতার শিমুল একাই তিনজনকে হত্যা করেছে বলে স্বীকার করেছে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল ) বিকেলে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ভবনে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত শিমুল (৩১) বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ থানার গোয়ালবাড়িয়া গ্রামের মৃত রুস্তম আলী পুত্র। সে বর্তমানে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন জুরাইন এলাকায় ভাড়ায় বসবাস করত। গ্রেফতারের পর রাতেই শিমুলকে নিয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের মিরেরবাগ এলাকায় আসাদুল্লাহর বাড়িতে যে ফ্লাটে বিথী আক্তার (২৪), তার ছেলে রাফসান (৪) এবং ফ্ল্যাটের সাবলেট নুপুর আক্তার (২৫) কে হত্যার পর ছুরি দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরা হয়েছিল,সেখান থেকে বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত বিথী আক্তার ও গ্রেফতার শিমুল স্বামী-স্ত্রী ছিল। কয়েক বছর আগে তাদের ডিভোর্স হওয়ার পরে বিথী আক্তার পুনরায় বিয়ে করেন। সেই ঘরেই রাফসান নামে চার বছরের একটি পুত্র সন্তান ছিল। গত এক বছর যাবত বিথীর বর্তমান স্বামী নিখোঁজ থাকায় শিমুল তার বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করত।
এ সময় তাদের মাঝে শারীরিক সম্পর্ক পুনরায় শুরু হলে বিথী শিমুলকে বিয়ে করতে চাপ দেয়। পরবর্তীতে শিমুল বীথিকে বিয়ে না করে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে বিথীকে হত্যার সময় চার বছরের ছেলে রাফসান দেখে ফেললে তাকেও হত্যা করা হয়। এ সময় ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে যাওয়ার সময় পার্শ্ববর্তী সাবলেট ভাড়াটিয়া নুপুর হত্যার দৃশ্য দেখে ফেলার পরে তাকেও একই উপায়ে গলায় গামছা পিছিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। হত্যার পর প্রথমে বাচ্চার লাশটি ছয় টুকরো করে বস্তার ভেতরে ভরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন তেঘরিয়া বেয়ারা বাজার এলাকায় ফেলে আসা হয়।
এরপর নুপুরের লাশ কয়েক টুকরো করে শরীরের অংশটুকু বস্তার মধ্যে ভরে কেরানীগঞ্জের আগানগর আসমা গার্ডেনের সামনে ফেলে আসা হয়। এছাড়া বিথির লাশ কয়েক টুকরো করে বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন স্থানে খেলা হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নুপুরের শরীরের অংশ ও শিশু রাফসানের লাশের ছয়টি টুকরো এবং তিনটি পা ও দুটি হাতের বাহু উদ্ধার করতে পেরেছে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানা ও নৌ পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত বিথির বড় বোন সাথী বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর