
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজারের উখিয়ার ঘুমধুম এলাকায় ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে কুখ্যাত ইয়াবা সিন্ডিকেট। এই চক্রের অন্যতম নিয়ন্ত্রক হিসেবে পরিচিত আলোচিত ব্যক্তি মো. ইলিয়াস বর্তমানে গা ঢাকা দিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযান ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে ধারাবাহিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
তবে তাকে নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এখন প্রশ্ন—ইলিয়াস কি সত্যিই পলাতক, নাকি কোনো প্রভাবশালী মহলের ছায়ায় আড়ালে অবস্থান করছেন?
প্রভাবশালী মহলের প্রশ্রয়?
বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে জানা গেছে, ইয়াবা সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা প্রকাশ্যে আসার পর ইলিয়াস নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে যান। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় একাধিক রাজনৈতিক নেতার সহযোগিতায় তিনি এখনো নিরাপদে রয়েছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্র জানায়, “ইলিয়াসকে প্রশাসন খুঁজে না পেলেও স্থানীয় একাধিক নেতা তাকে রক্ষা করতে সক্রিয় রয়েছেন।”
এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে আলোচিত দুই নেতার নাম উঠে এসেছে—সাইফুদ্দিন বাহাদুর ও মুজিবুর রহমান। অভিযোগ রয়েছে, তারা ইলিয়াসের সঙ্গে ব্যবসায়িক অংশীদার এবং তাকে আইনের হাত থেকে রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাইফুদ্দিন বাহাদুর বলেন, “ইলিয়াসকে আমি ব্যক্তিগতভাবে খারাপ মনে করি না। তার সঙ্গে কোনো অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে আমার সম্পৃক্ততা নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি তাকে খুঁজে পায়, গ্রেপ্তারে আমার কোনো আপত্তি নেই।”
অন্যদিকে, সিরাজুল ইসলাম বলেন, “ইলিয়াসের সঙ্গে আমার ব্যবসায়িক যোগাযোগ রয়েছে। তবে তার কোনো অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা নেই।”
প্রশাসনের নজরে
সূত্র জানায়, মো. ইলিয়াস ‘৮ সিস্টার সিন্ডিকেট’ নামে পরিচিত একটি সংঘবদ্ধ চক্রের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। সীমান্তপথে ইয়াবা পাচারে তার বড় ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। ২০২০ সালে বিপুল পরিমাণ ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হলেও জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি আরও সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও সম্পদ আত্মীয়স্বজনের নামে থাকা এবং নিজস্ব বাহিনী দিয়ে মাদক পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ রয়েছে।
দলীয় অবস্থান
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য সাচিং প্রু জেরী বলেন, “দল দুর্নীতি ও অপরাধের বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। ইলিয়াসের বিষয়ে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
জনমনে ক্ষোভ
স্থানীয়রা বলছেন, “চিহ্নিত অপরাধীরা যদি রাজনৈতিক আশ্রয়ে পালিয়ে থাকতে পারে, তবে মাদকবিরোধী অভিযান শুধু লোক দেখানো। এর ফলে সাধারণ মানুষ আস্থা হারাচ্ছে।”
সর্বশেষ খবর