
একই কৃষিপণ্যের উপর পৃথকভাবে তিন দফা কর বা টোল আরোপ করায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার কৃষক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এবং ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভার পক্ষ থেকে পৃথকভাবে কর আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও সাধারণ ব্যবসায়ী।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে গিয়ে প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদ, পরে পৌরসভা কিংবা উপজেলা পরিষদকে পৃথকভাবে টোল দিতে হয়। যদি ওই পণ্য অন্য জেলা বা অঞ্চলে রপ্তানি করতে হয়, সেক্ষেত্রে আবার জেলা পরিষদ টোল আদায় করে।
লামার রূপসীপাড়া ইউনিয়নের শিলেরতুয়া ও অংহ্লা পাড়ার কৃষক রমজান আলী, ওসমান গনি ও মো. সোহেল বলেন, “একই পণ্যের উপর একাধিক দফা টোল দিতে গিয়ে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। কলা, কাঁঠাল, মরিচ, তামাক এমনকি গরুর উপরেও অতিরিক্ত টোল আদায় করা হচ্ছে।”
আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মমতাজ মিয়া বলেন, “আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে টোল দেয়ার পরও উপজেলা পরিষদের গেটেও ফের টোল দিতে হয়। এরপর পণ্য অন্য জেলায় পাঠালে জেলা পরিষদের টোল দিতে হয়। এভাবে একাধিক দফা টোল দিতে গিয়ে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”
কৃষকদের অভিযোগ, পণ্যের উপর ধার্য টোলের পরিমাণও তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। তাদের ভাষ্যমতে—
তাদের দাবি, কৃষিপণ্যের উপর এই ধরনের অতিরিক্ত চাপ “গলা কাটা”র শামিল। তারা বলেন, কৃষিপ্রধান দেশে কৃষকের উপর এ ধরনের জুলুম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
প্রশাসনিক সূত্র জানায়, ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারিতে স্থানীয় সরকার বিভাগের এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পার্বত্য তিন জেলা পরিষদকে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের টোল আদায় ও ইজারা প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে সভায় টোল ও ইজারার আয় বণ্টনের হিস্যাও নির্ধারণ করা হয়। তাতে বলা হয়—
পৌর এলাকার মধ্যে: বাজার ফান্ড ৪০%, পৌরসভা ৪০%, উপজেলা ২০%
পৌর এলাকার বাইরে: জেলা পরিষদ ৫৫%, উপজেলা পরিষদ ৪৫% (উপজেলা অংশ থেকে ইউনিয়ন পরিষদে সমন্বয়ের কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে)।
সম্প্রতি দ্বৈত কর আদায়ের বিষয়টি বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের নজরে এলে পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাই গত ২৭ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে এক স্মারক (নং ২৯.৩৫.০৩০০.০০৩.৪২.০৫৮.২৫.৭১৯) জারির মাধ্যমে আলীকদম উপজেলা পরিষদের টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ প্রশাসক আব্দুল্লাহ আল মুমিন বলেন, “জেলা পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ীই টোল আদায় কার্যক্রম পরিচালিত হবে।”
অন্যদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, “দ্বৈত করের বিষয়ে কেউ এখনো আমাকে অবহিত করেনি। তবে কৃষকদের হয়রানি করা যাবে না, এ বিষয়ে সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সর্বশেষ খবর