দেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে
শাহরিয়ার আমিন ও রাকিবুল হাসান রাকিব: বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষিকে নির্ভর করেই টিকে আছে এদেশের অর্থনীতি। কৃষির উন্নতিই আমাদের দেশের উন্নতি। আর আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষিতে উন্নয়ন সম্ভব ঘটছে। তাইতো যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে আর্বিভাব হয়েছে নতুন নতুন লাগসই ও টেকসই কৃষি প্রযুক্তি। পরিবর্তিত হয়েছে দেশীয় কৃষি যন্ত্রপাতি, উৎপাদন, সংরক্ষণের, প্রক্রিয়াজাত করণের প্রযুক্তি ও কলাকৌশল যোগাযোগ ও বিপণনের প্রাচীন ব্যবস্থা।
প্রাচীনকালে ব্যবহৃত কৃষকদের কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি আজ বিলুপ্তপ্রায়। আধুনিককালে শহরের মানুষ সহ গ্রামের কৃষকদের সন্তানেরাও আজ ভুলতে বসেছে সেই ঐতিহ্যর কৃষি যন্ত্রপাতি ও কৃষকের ব্যবহৃত জিনিসপত্র। কৃষি ও কৃষকের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণ ও যন্ত্রপাতি বিলুপ্তপ্রায়।
তাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ, প্রদর্শন এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জাতীয় চেতনা ও উপলব্ধিকে শানিত করে কৃষির বিবর্তন ও ক্রমবিকাশের পরিস্কার ধারণা দিতেই গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) চত্বরে অবস্থিত দেশের প্রথম ‘কৃষি জাদুঘর’।
জাদুঘরটি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে ৫০০ মিটার পশ্চিমে এবং বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে অবস্থিত। কৃষি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য, কৃষি উপকরণ এবং যন্ত্রপাতি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণে বাকৃবি সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ হোসেন স্বপ্ন দেখেন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি ‘কৃষি জাদুঘর’ গড়ে তোলার। তারই আলোকে ২০০২ সালের ২৪ জানুয়ারি তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মু. মুস্তাফিজুর রহমান জাদুঘরটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০০৩ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আমিরুল ইসলাম জাদুঘরের উদ্বোধন করেন। জনবল সংকট ও অন্যান্য পারিপার্শ্বিক কারণে এটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলেও অবশেষে ২০০৭ সালের ৩০জুন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোশারফ হোসাইন মিঞাঁ জাদুঘরটি সকলের জন্য উন্মুক্ত করেন।
পাঁচ একর আয়তনের এই জাদুঘরে রয়েছে একটি অষ্টাভূজী ভবন। ভবনের মধ্যবর্তী অংশ সূর্যালোকের জন্য উন্মুক্ত রেখে প্রবেশ লবি ও অফিসের জন্য একটি করে মোট ২ টি কক্ষ এবং প্রদর্শনীর জন্য ৬ টি সুসজ্জিত ও মনোরম কক্ষ রয়েছে।
জাদুঘরে প্রদর্শনীর জন্য রয়েছে ৬ টি ডিসপ্লে রুম। যাতে বড় বড় কাঁচের তাকে সাজানো রয়েছে ৪৪৯ টি উপকরণ। জাদুঘরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় আবহমান কাল ধরে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত মানুষের জীবন জীবিকার বাস্তব প্রতিকৃতি ‘বন্ধন’। জাদুঘরের প্রবেশ লবিতে প্রদর্শিত হয়েছে বিচিত্র সব মাছের অ্যাকুইরিয়ামসহ সাতটি খনার বচন।
প্রথম এবং দ্বিতীয় ডিসপ্লে রুমে রয়েছে রয়েছে নাম জানা অজানা উপকরণের সমাহার। এই সব উপকরণের তাদের লোকাল নাম, বৈজ্ঞানিক নাম, সংগ্রহের উৎস, ব্যবহার ইত্যাদি উল্লেখ রয়েছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা এবং পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষ জ্ঞান অর্জন করতে পারে। এতে রয়েছে অনেক গবাদি পশুর কৃমি, বাংলায় প্রাপ্য সব ধরনের মাটি, মাছ, ধান, পাহাড়ি চাষাবাদের মডেল, বিভিন্ন রোগের চিত্রসহ বর্ণনা, বিভিন্ন মসলার উপকরণ, তেল বীজ, ঔষুধি ফল ও পাতা, বিড়াল, অজাগর, ক্যাঙ্গারুসহ বিভিন্ন প্রাণীর কংকাল,বিভিন্ন প্রকার শিং এবং বিরাটাকার শকুন।
তৃতীয় ডিসপ্লে রুমকে বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক বলা যেতে পারে। কারণ এতে স্থান পেয়েছে বহুদিন ধরে বাংলায় গৃহস্থালীর কাজে ব্যবহৃত উপকরণ। তার মধ্যে রয়েছে ঢেকি, কুলা, মুরগির খাঁচা, দাবা, হুকা, পানের ডাবর, গরুর গাড়ির মডেল, জিপসী, হরেক রকমের হারিকেন, গাছা, কুপি বাতি, বেহালা, তবলাসহ বিভিন্ন দেশীয় বাদ্যযন্ত্র।
চতুর্থ ডিসপ্লে রুমে স্থান পেয়েছে জমি চাষাবাদের যন্ত্রপাতি এবং পূর্বে ব্যবহৃত ইলেকট্রনিক যন্ত্রাদি। যেমন দা, কোদাল, শাবল, মাইক্রোকম্পিউটার, তীর, ধনুক, ইথিস্কোপ, ডট প্রিন্টার ইত্যাদি যন্ত্রপাতি।
পঞ্চম ডিসপ্লে রুমে রয়েছে কৃষকেরা পূর্ণাঙ্গ বসত বাড়ির মডেল, লাঙ্গল, হাল চাষের মডেল ইত্যাদি।
সর্বশেষ ডিসপ্লে রুমে রয়েছে জমি চাষাবাদের জন্য পাওয়ার টিলার, ধান মাড়াইয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি ও বাংলার গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি নকশী কাঁথা, রুমাল সহ গারো সম্প্রদায়ের পোশাক অর্ণা ,ঘাণি ইত্যাদি লোচন কাড়া উপকরণ।
কৃষি সংশ্লিষ্ট এত বিশাল সংগ্রহশালা বাংলাদেশের আর কোথাও নেই। জাদুঘরটি পরিদশর্নের মাধ্যমে শহরের ইট পাথর কাঁচঘেরা মানুষেরা খুব সহজেই গ্রামবাংলার প্রকৃতি ও হারিয়ে যাওয়া দৃশ্য এক নজরে উপভোগ করতে পারেন। তারা কৃষির ঐতিহ্য সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। জাদুঘরটি শুধুমাত্র শনিবার ছাড়া বাকি দিনগুলিতে সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য খোলা থাকে।
বিডি২৪লাইভ/এইচকে
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: