ভুয়া ডলার বিক্রি চক্রের ফাঁদে নিঃস্ব মাসুদ

প্রকাশিত: ২৩ মে ২০১৮, ০১:৫৮ পিএম

একটা সময় কলশ ভর্তি টাকা পাওয়ার গল্প শোনা যেতো। শোনা যেতো বাড়ির নিচে হীরা-জহরতের কথা। এই গুলো শুধু শোনাই যেতো, বাস্তাবে কেউ পেয়েছে কি না তা আর কখনো জানা যায়নি। কিন্তু এখন শোনা যায় সোনার বার আর ডলার পাওয়ার কথা।

বেসরকারি একটি টেলিভিশনের একটি অনুসন্ধান মূলক অনুষ্ঠানে একটি পর্বে দেখা যায়, ভুয়া ডলার বেচা-কেনার গল্প। 

ভুয়া ডলারের লোভে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে অনেকেই। তার মধ্যে গাজীপুর কোনাবাড়ির মাসুদ রানা পেশায় কাঠ মিস্ত্রি। তিশা নামের এক মেয়ের সাথে তিন মাস ধরে পরিচয় মাসুদের। একদিন রাতে তিশা মাসুদকে বলেন, আমার কাকা রাস্তায় কিছু ডলার পেয়েছেন কিন্তু ডলার গুলো আসল নাকি নকল বুঝতে পারছিনা। আপনিতো ঢাকায় থাকেন একটু আসেন।

মাসুদ লোভে রাতেই ঢাকা থেকে গাইবান্ধায় যান, তিশা মাসুদকে তিনটি ডলার বের করে দেন। তিনটি বান্ডিল থেকে। মাসুদ চেক করে দেখেন আসল ডলার। লোভে পরে মাসুদ সব গুলো ডলার কিনে নেন ২ লাখ টাকা দিয়ে। টাকা দেওয়ার কিছু সময় পরে সাত থেকে আট জন লোক মাসুদকে ঘিরে ধরে বলেন, আমরা আইনের লোক। তোরা ডলারের ব্যবসা করিস। এখন তোদের থানায় নিয়ে মামলা দিবো। পরে সেখান থেকে সব টাকা পয়সা দিয়ে মাসুদ নিজের জীবন নিয়ে ফিরে আসেন।

অনুসন্ধানে দেখা যায় মাসুদের মতো এমন আর অনেকেই ডলারের ফাঁদে পা বাড়িয়েছে। অনেকেই হয়েছে সর্বহারা।

ডলার চক্রের মূল হোতারা থাকেন গাইবান্ধায়। গাইবান্ধা থানার পুলিশ সুপার মইনুল হক বলেন, এইটা একটা বিস্তর পেশা। যারা বিদেশ থাকেন, তাদের বাড়িতে বিভিন্ন পেশায় প্রতারণার চক্রের লোক গুলো যায়। তারপর কিছুদিন কাজ করে বলেন, রাস্তায় এই ডলার গুলো আমার চাচা পেয়েছেন। আমরা গরীব মানুষ এ গুলো দিয়ে কি করবো, আপনি কিছু একটা করেন। পরে মালিক লোভে পরে সে গুলো কিনতে যায় তারপরই ধরা খায়।

ডলার বিক্রির এই দলের মূল হোতা গাইবান্ধার নুর মোহাম্মদ। তার অধীনে বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে এর চক্র। সাদুল্লাহ গ্রাম নিয়ন্ত্রণ করেন আব্দুল আজিজ। জামালপুর ইউনিয়ন নিয়ন্ত্রণ করে আব্দুর রশিদ। নুর মণ্ডল নিয়ন্ত্রণ করেন ফরিদপুর। প্রতিটি দলের শতাধিক সদস্য এই ব্যবসা নিয়ন্ত্রন করে।

ওই অনুসন্ধানে দেখা যায়, ভুয়া ডলার বিক্রির মূল হোতা নুর মোহাম্মদকে ধরতে পুলিশ গাইবান্ধা সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের তার বাড়িতে অভিযান চালায়। অনেক তল্লাশি করে তাকে পাওয়া যায়নি। তারপর নুর মোহাম্মদের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ি গিয়ে দেখা যায় প্রতিটা ঘরে তালা মারা। তবে নুর মোহাম্মদের গ্রামের আলিশান বাড়ির অবস্থা দেখলে বুঝা যায় তিনি কি পরিমান ভুয়া ডলার বিক্রি করেছেন। তা ছাড়া এলাকার সবাই জানেন তার কর্মের কথা।

গাইবান্ধা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান মিয়া বলেন, ব্যাগ বদল, জিনের বাদশা এবং ভুয়া ডলার বিক্রি একেবারেই যে শেষ হয়ে গেছে এই এলাকা থেকে তা নিশ্চিত বলবনা তবে আমাদের দল কাজ করছে। আমরা আশা করি খুব দ্রুত এই চক্রকে নিঃশেষ করতে পারবো এই এলাকা থেকে।

বিডি২৪লাইভ/এমএন/এসএস 

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: