‘বন্দুকযুদ্ধে’ সাত জেলায় নিহত ৯

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৮, ০৮:৪৭ এএম

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ৯ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় দুজন র‌্যাব ও ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানা যায়।

শুক্রবার (২৫ মে) দিবাগত রাত থেকে শনিবার (২৬ মে) ভোর পর্যন্ত এসব বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক নিহতদের পরিচয় জানা যায়নি।

তার মধ্যে কুমিল্লায়-২, দিনাজপুরে-২, চাঁদপুরে-১, জয়পুরহাটে-১, ময়মনসিংহে-১ ও আরও দুই জেলায় একজন করে সাত জেলায় মোট ৯ জন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বিডি২৪লাইভের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরের আংশিক চিত্র তুলে ধরা হল-

কুমিল্লা

পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জেলার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বাগরা বাবুল (৪০) ও আলমাস (৩৬) নামে দুই যুবক নিহত হয়েছেন। নিহতরা মাদক ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে পুলিশ। নিহত বাবুলের বিরুদ্ধে ১৬টি মাদকের মামলা রয়েছে। আলমাস উপজেলার দক্ষিণ তেতাভূমি গ্রামের আফাজ উদ্দিনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে আটটি মাদকের মামলা রয়েছে।

ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহ জাহান কবির জানান, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করতে ব্রাহ্মণপাড়া- দেবিদ্বার সার্কেলের এএসসি শেখ মোহাম্মদ সেলিম ও ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজান কবির সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপজেলার বাগরা এলাকায় অবস্থান নেয়। রাত দেড়টার দিকে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস তাদের সহযোগীদের নিয়ে সেখানে পৌঁছলে তাদের আটকের চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল ও আলমাস গুরুতর আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে কুমেক হাসপাতালে নেয়ার পথে উভয়ের মৃত্যু হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৪০ কেজি গাঁজা ও একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।

দিনাজপুর

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলায় র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন ও সদর উপজেলার রামসাগরে দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলি বিনিময়ে আরও একজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- বীরগঞ্জ উপজেলার চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা সাবদারুল ইসলাম (৪২) ও নিহত আবদুস সালাম ওই এলাকার মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১৩ দিনাজপুর ক্যাম্পের অধিনায়ক (সিও) মেজর তালুকদার নাজমুছ সাকিব জানান, শুক্রবার ভোর রাতে বীরগঞ্জে বিপুল মাদক পাচারের খবর পেয়ে র‌্যাব অভিযান চালায়। এসময় র‌্যাবকে লক্ষ্য করে সাবদারুল গুলি ছুড়লে র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন তিনি। পরে তার কাছে একটি বিদেশি পিস্তল, চার রাউন্ড তাজা গুলি, এক রাউন্ড গুলির খোসা, প্রায় দুই কেজি গাঁজা ও ১০০ বোতল ফেনসিডিল পাওয়া যায়। এ ঘটনায় আহত হন দুই র‌্যাব সদস্য।

এদিকে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ওসি রেদওয়ানুর রহিম জানান, রাতে রামসাগর এলাকায় দুই দল মাদক বিক্রেতার মধ্যে গুলি বিনিময় হয়। খবর পেয়ে পুলিশের একটি টহল দল সেখানে গেলে আবদুস সালামকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে। এ অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক আবদুস সালামকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল, চারটি হাত বোমা, একটি পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

চাঁদপুর

চাঁদপুর জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) ও কচুয়া থানা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক বিক্রেতা বাবলু (৩৫) নিহত হয়েছেন বলে দাবি পুলিশের। তার বিরুদ্ধে কচুয়া থানায় পাঁচটি মাদক মামলা রয়েছে।

কচুয়া থানার ওসি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, শুক্রবার দিনগত রাত ৩টার দিকে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ১০ নম্বর আশরাফপুর ইউনিয়নের বনরা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এসময় তার বাড়ি থেকে ১১০ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা ডিবি ও কচুয়া থানা পুলিশ বাবলুর বাড়িতে যৌথ অভিযান চালায়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে তিনি গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে গুলিবিদ্ধ হন বাবলু। এ অবস্থায় বাবলুকে উদ্ধার করে কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মরদেহ কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছে।

জয়পুরহাট

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার ভিমপুর এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রেন্টু নামের এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে ফেনসিডিল, এক নলা বন্দুক ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে বলেও দাবি করেছে র‌্যাব।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্প কমান্ডার শামীম হোসেন জানান, মাদকের একটি বড় চালান কেনাবেচা হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে র‌্যাবের একটি দল রাতে ভিমপুর এলাকায় যায়। টের পেয়ে মাদক বিক্রেতারা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছুড়লে ওই মাদক বিক্রেতা গুলিবিদ্ধ হন এবং বাকি চারজন পালিয়ে যান। পরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ওই ব্যক্তিকে পাঁচবিবি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

ময়মনসিংহ

জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শাহজাহান (৩০) নামে এক মাদক বিক্রেতা নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ। শুক্রবার দিবাগত রাতে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

উল্লেখ্য, র‌্যাব ও পুলিশের মাদকবিরোধি অভিযান ঘিরে গত তিন সপ্তাহে নিহতের সংখ্যা ৭০ জনে দাঁড়ালো। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই অভিযান কি কোনো তালিকার ভিত্তিতে হচ্ছে? সে তালিকা কার করা? এ প্রশ্নে পাওয়া যাচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য।

পুলিশ এবং র‍্যাবের সূত্রগুলো বলছে, তারা তাদের স্ব স্ব বাহিনীর তালিকা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে অভিযান চালাচ্ছে।

এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের সময় এমন অভিযান নিয়ে রাজনৈতিকভাবে বিতর্ক হতে পারে। সেজন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কাজ শেষ হওয়ার আগেই এই অভিযান শুরু করা হয়েছে।

তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দীন দাবি করেছেন, সমন্বিত তালিকার ভিত্তিতেই এই অভিযান চলছে।


বিডি২৪লাইভ/এএইচআর

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: