সৌদির বর্বর অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরলেন মাজেদা

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০১৮, ১১:২৩ পিএম

মোস্তফা কামাল,
সখীপুর (টাঙ্গাইল) থেকে:

ভাগ্য ফিরবে এই আশায় গৃহকর্মী ভিসায় সৌদি আরব যান মাজেদা। কথা ছিলো রিয়াদ শহরে গিয়ে দুজন বৃদ্ধের দেখাশোনা করতে হবে। যাওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত নির্যাতনের স্বীকার হন তিনি। প্রতিবাদ তো দূরের কথা ওহ শব্দটুকু করতে পারেন না নির্যাতিত নারীরা। টাকার বিনিময়ে আনা নারীদের সবই যেন তাদের কেনা। শব্দহীন জীবন, নিরন্তর বর্বর এমন অভিজ্ঞতার কথা বলতে বলতে চোখের পানিতে বুক ভাসান সৌদি ফেরত নারী কর্মী মাজেদা (৪৫)।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ মে) লোমহর্ষক ও বর্বর নির্যাতনের কথা জানান সৌদি ফেরত টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ার ছিট গ্রামের মাজেদা বেগম। তিনি আত্মসম্মান ও নানা ভয়ে নিজের বাড়িতে না ওঠে উপজেলার ভগ্নিপতির বাড়িতে ওঠেছেন। শনিবার (২৬ মে) বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে কথা হয় মাজেদার সঙ্গে। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে নামেন। দুপুর আড়াইটায় তিনি ভগ্নীপতির বাড়িতে পৌঁছান।

মাজেদা বেগম বলেন, 'আমাকে সৌদির রিয়াদের একটি ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনসহ বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালানো হতো।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার সঙ্গে আরও ৪০/৫০ জন নারী ছিলেন। তাদের রাতে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হতো। অনেক সময় পর ওই রাতেই আবার ঘরে এনে রাখা হতো, মারধর করা হতো। সেখানে একবেলা শুধু লবণ দিয়ে খাবার দিত। ওই খাবারটুকু খাওয়া সবার জন্য অনেক কষ্টের ছিলো। আরো অনেক নারীর কষ্টের কথা বলেন মাজেদা বেগম।

তিনি বলেন, ওদের কথা না শুনলে লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন অংশে ছ্যাকা দিত,সহজে পাষবিক কর্মে রাজি না হলে শরীরে গরম পানি ঢেলে দিত। আমি আর কাউকে বিদেশ যেতে দেব না।' তিনি তার সঙ্গে থাকা ওই নারীদের রক্ষারও দাবি জানান। মাজেদা বেগমকে ঢাকার বি.এ অ্যাসোসিয়েটসের এজেন্সির মাধ্যমে সৌদি আরবে পাঠায় টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার বানিয়ারছিট গ্রামের স্থানীয় দালাল সাইফুল ইসলাম। তিনি ওই এলাকার মহর আলীর ছেলে ও সাবেক ইউপি সদস্য।

মাজেদা বেগমের মেয়ে শম্পা আক্তার বলেন, ২৫ এপ্রিল সৌদি পাঠানোর ১৫ দিন পরেও তার মা মাজেদা বেগমের কোনও খবর পাচ্ছিল না তারা। হঠাৎ একদিন বাড়িতে মাজেদা বেগম ফোন দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমাকে দেশে ফেরত নিয়ে যাও। আমাকে রিয়াদ শহরের একটি ঘরে আটকে রেখে মারধর করছে ওরা। তিনি সেসময় আরও জানিয়েছিলেন, বেশ কয়েকজন নারীকেও এখানে একসঙ্গে আটকে রেখে নির্যাতন করা হচ্ছে।'

শম্পা আক্তার বলেন, 'সাইফুল দালাল আমার মাকে সৌদি পাঠায়। সেখানে যাওয়া বাবদ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাইফুল দালালকে নগদ ৩৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। বাকি টাকা বেতন থেকে কেটে নেয়ার কথা ছিল। মাকে সৌদি নিয়ে সাইফুল দালালের লোকজন আটকে রাখে। মাকে দেশে ফেরত আনতে এক লাখ ৬০ হাজার টাকাও দাবি করেছিল সাইফুল।

সম্পা আক্তার বলেন, ‘কয়েকদিন আগে সাইফুল মেম্বার তাদের বি.এ অ্যাসোসিয়েটসে আমাদের নিয়ে যায়। সেখানেও এক লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করা হয়।'

স্থানীয় ইউপি সদস্য কিসমত আলী জানান, মাজেদার পরিবারটি অত্যন্ত দরিদ্র। মাজেদার স্বামী দিনমজুর খাটতো এখন অসুস্থ। শুনেছি মাজেদা বেগমকে সৌদিতে আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হচ্ছে। তবে, অভিযুক্ত স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম মুক্তিপণ হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার টাকা চাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন তবে মাজেদার ওপর সৌদিতে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি বলেন, 'ঢাকার নয়াপল্টনের বি.এ অ্যাসোসিয়েটসের মাধ্যমে মাজেদা বেগমকে সৌদি আরবে পাঠানো হয়েছে। জেনেছি সেখানে তাকে নির্যাতন চালানো হয়েছে।' মাজেদা বেগমকে তার চেষ্টায় সৌদি থেকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে বলে সাইফুল জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় এক নারী বলেন, ওর সাথে (মাজেদা) আরো অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু মান সম্মানের ভয়ে তা বলতে পারছেনা ।

এ ঘটনায় সখীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম তুহীন বলেন, 'এ বিষয়ে নির্যাতনের শিকার ওই নারী অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিডি২৪লাইভ/এমকে

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: