ভাই ভাই দ্বন্দ্ব, অনিয়মে জর্জরিত সাফিনা পার্ক!

শামসুজ্জোহা বাবু, রাজশাহী থেকে: ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলাধীন মোহনপুর ইউনিয়ন দিগরাম ঘুণ্ঠি এলাকায় গড়ে ওঠে সাফিনা পার্ক লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি। সাইফুল ইসলাম ও ফজলুর রহমান নামে দুই ভাই মিলে গড়ে তোলে এই পার্কটি।
কিন্তু, এই পার্কটি লিমিটেড কোম্পানি হওয়া স্বত্ত্বেও পার্কের নামে নিজস্ব কোন জমি নেই। পার্কের সম্পূর্ণ জমিটুকু ব্যক্তি মালিকানাধীন বা লীজ নেয়া। মোট ২৬ বিঘা জমির মধ্যে সাইফুল ইসলামের নামে ৭ বিঘা, সাইফুলের স্ত্রী নাসরিন সুলতানার নামে ১ বিঘা, ফজলুর রহমানের নামে ৮ বিঘা এবং তার স্ত্রী আকলিমার নামে ৩ বিঘা এবং বাকী ৭ বিঘা লীজ নেয়া। তাহলে নিয়ম অনুযায়ী পার্কের নামে জমি রেজিস্ট্রি করার কথা থাকলেও তা আছে ব্যক্তির নামে।
ফজলুর রহমান চেয়ারম্যান ও সাইফুল ইসলাম ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে পার্কটি শুরু হলেও ২০১৩ সালে দুই ভাইয়ের মধ্যে অংশীদারিত্ব নিয়ে শুরু হয় দ্বন্দ্ব। দ্বন্দ্বের ফলে সে সময় উভয় পক্ষ এবং স্বাক্ষীগণসহ গ্রাম্য ভাবে একটি সালিসনামা তৈরি হয়। যেখানে ফজলুর রহমান শতকরা ৭০% হিসেবে চেয়ারমেনের দায়িত্ব ও সাইফুল ইসলাম ৩০% হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব থেকে পার্কটি পরিচালনা করবে।
২০১৪ সালে হঠাৎ দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যাওয়ায় ১লা নভেম্বর ২০১৪ তারিখে সাইফুল ইসলামকে না জানিয়ে বা কোন স্বাক্ষর গ্রহণ না করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ অফিসে লিমিটেড কোম্পানি বহিতে ফজলুর রহমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সাইফুল ইসলামকে তার অংশীদারিত্ব শতকরা ১০% হারে চেয়ারমম্যানের দায়িত্ব দিয়ে একটি পত্র পাঠিয়ে দেন। পার্ক উদ্বোধন এর পর থেকেই কোন লভ্যাংশ পাননি সাইফুল ইসলাম। এর কিছুদিন পরেই ২০১৪ সালে ৩০% হারে ১১ লাখ ৫২ হাজার টাকা লাভ পান সাইফুল ইসলাম। টাকা নেওয়ার কিছুদিন পর থেকেই এদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়। কারণ লিমিটেড কোম্পানী বহিতে সাইফুল ইসলামের ১০% হারে অংশীদার থাকলেও লভ্যাংশ পেলেন ৩০% হারে। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে দ্বন্দ আরও বেড়ে যায়। এতে করে ছোট ভাই সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে বড় ভাই ফজলুর রহমান একটি মামলা দায়ের করে। পরে সাইফুল ইসলামও ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করেন। পরে সাইফুল ইসলাম ৩১ শে মার্চ ২০১৫ তারিখ পর্যন্ত লাভের টাকা চাইতে গেলে হেনস্তা করে পার্কের সকল কার্যক্রম থেকে বাদ দিতে চান ফজলুর রহমান। তার কিছুদিন পরে ১লা এপ্রিল ২০১৬ তারিখে আবার পুনরায় টাকা চাইলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিঘ্নিত ঘটলে স্থানীয় প্রশাসন গিয়ে হাজির হয়। এ অবস্থায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খালিদ হোসেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য পার্কটি সিলগালা করে দেন। এর পরে উভয় পক্ষ পাল্টা পাল্টি অনাস্থা ও ছিনতাইয়ের একাধিক মামলা করতে থাকেন। আর এসব মামলার স্বাক্ষী, বাদী ও বিবাদী ওই পার্কের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
উল্লেখ্য, ফজলুর রহমান মারা যাওয়ায় বর্তমানে তার ছেলে মিজানুর রহমান ও মেয়ে ফরিদা ইয়াসমিন এই পার্কটি পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে। প্রায় ২৪ মাস পর ২৮ মে ২০১৮ তারিখে বিজ্ঞ আদালত পার্কটি খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন। কিন্তু, এর পরিচালনা করবে উপজেলা প্রশাসন।
বিজ্ঞ আদালতের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ থাকে যে, শেয়ারের বিষয় পূর্ণনির্ধারিত ব্যতিত পার্ক খুলে দেওয়া হলে আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে। এমতাবস্থায় উপজেলা প্রশাসনের তত্ববধায়নে পার্কটি খোলার অনুমতি প্রদান করা হলো। উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা না হওয়া পর্যন্ত পার্কের পরিচালনা খরচ ব্যতীত যাবতীয় অর্থ একটি নির্দিষ্ট একাউন্টে জমা থাকবে। সমঝোতা হওয়ার পর অংশ মোতাবেক এই অর্থ প্রাপ্ত হবে।
এলাকাবাসীর দাবি অবিলম্বে সুষ্ঠুভাবে পার্কটি খুলে দেয়া হলে অনেক লোকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ বিনোদনের ব্যবস্থা হবে। কিন্তু, এমতাবস্থায় চলতে থাকলে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে। যত দ্রুত সম্ভব এটির সুষ্ঠু সমাধান করে পার্কটি পরিচালনা করা হোক।
উপজেলা প্রসাশন পার্কটি পরিচালনা করলেও এ বিষয়ে অভিযোগ তুলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার বড় ভাইয়ের অবর্তমানে তার উত্তরসূরি ছেলে মেয়েরা টাকার দাপটে ইউএনও এর সাথে যোসাজস করে পার্কটি পরিচালনা করছেন। এবং যে কর্মচারীরা আমার বিরুদ্ধে বাদী হয়ে মামলা করেছে বা স্বাক্ষী রয়েছে তারা কি করে বর্তমানে পার্ক পরিচালনা করতে পারে। তাহলে নিরাপেক্ষতার কি থাকল? এছাড়াও নানা অনিয়মে জর্জরিত এই পার্কটি।
পার্কের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান মিজান বলেন, আমরা বরাবরই ছাড় দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করেছি। কিন্তু, আমার চাচা মানতে চাইনি এখন আইনি প্রক্রিয়ায় যে ভাবে পাবেন উনি নিবেন। আর আমরা যেভাবে পাব নিবো।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল আকতার বলেন, বিগত দিনের সমস্যা গুলো তাদেরও পারিবারিক সম্যসা। আমি এই উপজেলায় দায়িত্ব গ্রহণ করার পর এই পার্কটি খুলে যায়। এবং বর্তমানে পার্কটি পরিচালনায় কোন ধরনের অনিয়ম নেই। তবে উভয় পক্ষের সমাধান হলে গোদাগাড়ীর বিনোদন প্রেমী মানুষের সুবিধা হতো।
বিডি২৪লাইভ/টিএএফ
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: