কি এই ভার্জিনিটি টেস্ট বা সতীত্বের পরীক্ষা?

ভার্জিনিটি টেস্ট। ভারতের মহারাষ্ট্রের কঞ্জরভাট জনজাতির মধ্যে গত ৪০০ বছর ধরে এটা প্রচলিত প্রথা। বিয়ের রাতে বধূকে প্রমাণ দিতে হবে যে তার যোনি অক্ষত। কীভাবে দিতে হবে প্রমাণ? সাদা চাদরের উপরে স্বামীর সঙ্গে যৌন সঙ্গম করে। সঙ্গমের আগে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় মুখোমুখি হতে হবে সম্প্রদায়ের কোনও মহিলার। আর সঙ্গমের পরের সকালে দাগ লাগা সাদা চাদর দেখাতে হবে রাতভর দরজার বাইরে অপেক্ষায় থাকা মোড়ল-মাতব্বরদের।
সাদা চাদরে দাগ দেখেই নববধূর কুমারীত্ব নিশ্চিত করবেন মোড়ল-মাতব্বরা। তার পরই সেই বিয়ে বৈধ হিসেবে গণ্য করা হবে। আর পরীক্ষায় পাশ না করলেই বিয়ে অবৈধ। সর্বসমক্ষে নববধূকে চরম লাঞ্ছনার মুখোমুখিও হতে হবে সে ক্ষেত্রে।
বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিন এশিয়ার অনেক দেশে কুমারিত্বের অগ্নিপরীক্ষা সম্পর্কে ছোটবেলা থেকেই মেয়ে শিশুকে শিক্ষা দেয়া হয় নিজ শরীর সম্পর্কে। সমাজের কাছে সতীত্ব (virginity) একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ, এ শব্দটি শুধুমাত্র নারীর জন্য। সতী নারী মানে কুমারী নারী, যে নারীর যোনী কোন পুরুষের স্পর্শ এখনো পায়নি। নারীর জন্য সতীত্ব। অথচ নারীর শরীরে কোন পুরুষের স্পর্শ পাওয়া মানে ঐ শরীর নষ্ট হয়ে যাওয়া, স্পর্শকারী পুরুষের শরীর তাতে নষ্ট হয় না, নারী একাই সতীত্ব হারায়। স্বামী ব্যতিত অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে সহবাস করা মানে মেয়েটি অসতী হয়ে যায়, অসতী মেয়েকে এ সমাজের পুরুষেরা বিয়ে করতে অপারগতা ও অনিচ্ছা প্রকাশ করে। সব ধরনের জীবাণুর আক্রমণ থেকে নারীর শরীরটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে শুধু একটি মাত্র পুরুষ(স্বামী) নামক জীবাণুর জন্য। বিয়ের প্রথম রাতে নারী সতীত্বের বা কুমারীত্বের (virginity test) পরীক্ষা দেবে! বাংলাদেশসহ রক্ষণশীল মুসলিম ও অমুসলিম দেশগুলোতে সতীত্বের সামাজিক ও ধার্মিক গুরুত্ব অনেক। সতীত্বের প্রমাণ হিসেবে দেখা হয় তার যৌনাঙ্গের ভেতরে সতিচ্ছদ পর্দা অক্ষত আছে কিনা বা আগে কখনো সে যৌন সম্পর্ক করেনি, বিয়ের রাতে তা প্রমাণের জন্য তাই প্রয়োজনে অনেক নারী অস্ত্রোপচার করতে বাধ্য হয়।
এককালে ভারতবর্ষে সতীত্ব হারানোর অভিযোগে স্ত্রী সীতাকে বিসর্জন দিয়েছিলেন রাম। আর এ যুগে পুরুষের বিকৃত মানসিকতার কাছে নারীদের দিতে হচ্ছে ‘দুই আঙ্গুল পরীক্ষা’ (two finger examination), আবার কোথাও গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে উত্তপ্ত লোহার রড ধরে সতীত্বের অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে নারীকে।
বিয়ের আগে যৌন পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষের সবচেয়ে উপভোগ্য হলো নারীর শরীর, সতী নারীর শরীর। নারীর সতীত্ব পুরষের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়। বিয়ের পরে মিলনের প্রথম রাতে স্ত্রীর যৌনাঙ্গ থেকে রক্ত বের না হলে অনেক স্বামী ভাবে তার স্ত্রী আগে সতীত্ব হারিয়েছে, কিন্তু নারীর এই সতীত্ব পরীক্ষা করার কোন উপায় নেই। তারপরও পুরুষ চায় নারীর সতীত্ব পরীক্ষা করতে। বিয়ের পরে তখনই পুরুষেরা সবচে’ সুখী হন, যখন জানতে পারেন তার স্ত্রী সতী। সমাজে একটি প্রবাদ আছেঃ ফুলশয্যার রাতের পরে বরের মা এসে বৌমার খাটের চাদর দেখেন, চাদরে রক্তের দাগ দেখতে পেলে তবেই শাশুড়ি মা খুশি হন, নয়তো তার মুখ অন্ধকার হয়ে যায়।
ভারতে নববধূর সতীত্ব খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয় এবং বিয়ের আগে যৌনক্রিয়াকে গর্হিত কাজ মনে করা হয়। আমরা জানি, এক সময় ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথা প্রচলিত ছিল। পৌরাণিক ও মধ্যযুগীয় আদর্শ মতে, মূলতঃ স্বত:প্রণোদিত হয়েই পতির মৃত্যুতে স্ত্রী অগ্নিতে আত্মাহুতি দিত। পৌরাণিক কাহিনীতে এ আত্মাহুতি অতিমাত্রায় শোকের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র ছিল ভিন্ন, কোন নারী স্বেচ্ছায় নিজের জীবন উৎসর্গ করত না। কোন স্ত্রীলোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করলে জীবিত স্ত্রীকে বাধ্য করা হয় সহমরণে যেতে, মৃত স্বামীর চিতার আগুনে জীবন্ত পুড়ে মরতে বাধ্য করা হত যাতে ঐ নারী স্বামীর মৃত্যুর পরে অন্য কোন পুরুষের সঙ্গে যৌনক্রিয়া করতে না পারে।
বিডি২৪লাইভ/এএস
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]

পাঠকের মন্তব্য: