মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ইবির ‘মুক্ত বাংলা’
এস আই রাজ,
ইবি প্রতিনিধি:
১৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দ ও উৎসবের একটি দিন। এই দিনে বাঙালি জাতির দামাল সন্তানেরা পশ্চিম পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ শেষে পুর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করেছিল। যার ফলে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামে স্বাধীন একটি দেশের। বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ নামে ভুখন্ডটি। তাইতো দিনটি আমাদের কাছে অতি আনন্দের, অতি গৌরবের। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের স্মরণে রচিত হয়েছে অনেক কবিতা। লেখা হয়েছে অনেক নাটক, উপন্যাস। নির্মাণ করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিখ্যাত চলচ্চিত্র। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেয় ভাস্কর্যপ্রেমী শিল্পীরা। তারাও মনের আপন মাধুরী মিশিয়ে রং-তুলির আচরে গড়ে তুলেছেন অনেক ভাস্কর্য যা দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এক্ষত্রে শিল্পীর নজর এড়াইনি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীট কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ও।
মহান মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মিত স্মারক ভাস্কর্যটির নাম ‘মুক্ত বাংলা’। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই ডানে তাকালে চোখে পড়বে অপূর্ব এই শিল্প কর্মটি। ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক একটি ভাস্কর্য থাকবে যা ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধকে স্মরণ করিয়ে দেবে এমন দাবি ছিল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের দীর্ঘদিনের। তবে এতে বাধ সাধে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন মৌলবাদী শিক্ষক ও ছাত্রসংগঠনের নেতারা। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১৯৯৬ সালের আগ পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি। অবশেষে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের দাবির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের তথা কর্মরত মুক্তিযোদ্ধা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সে আশা একদিন পূরণ হয়। ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইনাম উল হক স্মারক ভাস্কর্য মুক্ত বাংলার উদ্বোধন করেন। ভাস্কর্যটির পরিকল্পনা ও নকশাকারী ভাস্কর্যবিদ রশীদ আহমেদ। মুক্ত বাংলার প্রবেশ পথে রয়েছে বৃত্তাকার কালো রঙ্গের একটি প্লেট। কালো রঙ্গের এই প্লেটটিতে নির্মাণশৈলীর বর্ণানা দেওয়া রয়েছে। মুক্ত বাংলার চারপাশ সিমেন্টের খুঁটির উপর লোহার শিকল দিয়ে ঘেরা। এছাড়া রয়েছে কিছু ফুলের গাছ যা মুক্ত বাংলার সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাতটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের হাতিয়ার দৃঢ় মুষ্টিতে ধরা একটি রাইফেল। মুজিবনগরে গঠিত সাত সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রীসভা স্মরণেই সাতটি স্তম্ভ। প্রতিটি স্তম্ভ বিমূর্ত হাত ধরাধরি উল্লসিত অবয়বে ইসলামী স্থাপত্যভিত্তিক আর্চ রচিত। চোখে রয়েছে লাল সূর্য উদয়ের প্রত্যাশা। সমুদয় অবকাঠামোটি সাতটি আর্চ সম্বলিত একটি অর্ধ উদিত উদীয়মান সূর্য। বেদীর মূল মেঝে সনদ মোজাইক নীল টাইলস। যার অর্থ শান্তি। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর বাংলার মানুষের মধ্যে যে স্বস্তি ফিরে এসেছিল তা বুঝাতে নীল টাইলস ব্যবহার করা হয়েছে। বেদীর উপর থেকে দ্বিতীয় ধাপে কালো পাথর বসানো। যা স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মহান আত্মত্যাগ নির্দেশ করে। সন্ধি ও যোগাযোগ বুঝাতে তৃতীয় ধাপে সাদা পাথর বসানো। চতুর্থ ধাপের লাল সিরামিক ইট আন্দোলন ও যুদ্ধ বুঝায়। লাগাতার আন্দোলন বুঝাতে বেদীর সর্বনিম্নে বিস্তৃত লাল বড় ইট বসানো রয়েছে। যেহেতু বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করে বাংলাদেশ শত্রু মুক্ত হয়েছিল তাই ভাস্কর্যটির নাম রাখা হয়েছে ‘মুক্ত বাংলা’। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক, ইবি প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বাংলা বিভাগের ছাত্র রাসেদুল ইসলাম অনু বলেন, ‘ ক্যাম্পাসে এমন একটি ভাস্কর্য থাকায় আমি ব্যক্তিগতভাবে একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসাবে খুবই গর্ববোধ করি। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি যখন মুক্ত বাংলার দিকে দৃষ্টি পড়ে তখনই মহান মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিজের অজান্তেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে।’ বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিষ্ট্রার ড. মসলেম উদ্দিন বলেন, ‘ অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফসল আমাদের স্বাধীনতা। এজন্য ৩০ লক্ষ শহীদকে তাদের রক্ত বিসর্জন দিতে হয়েছে। সম্ভ্রমহানি হয়েছে ২ লক্ষ মা-বোনের। মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য মুক্ত বাংলা সেই কথায় আমাদের স্মরণ করে দেয়। তিনি বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও এমন একটি স্মারক ভাস্কর্য থাকায় আমি গর্বিত।’
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: