মহা সমস্যায় ব্যাংক খাত
দেশের ব্যাংকগুলো সমস্যা কাটছেই না, বিভিন্ন ব্যাংক জালিয়াতির পর এখন আরো নতুন নতুন সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে এ খাত।
সূত্র জানায়, প্রবাসীদের মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত নতুন প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এক জুনিয়র কর্মকর্তাকে বার্ষিক আমানত সংগ্রহের টার্গেট দেওয়া হয়েছে ৬ কোটি টাকা। এ হিসেবে প্রতি মাসে তাকে ৫০ লাখ টাকা আমানত সংগ্রহ করতে হবে। একই সময়ে অন্তত ১০০টি নতুন অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে।
বেসরকারি মালিকানায় প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় প্রজন্মের আরেকটি ব্যাংকের একজন সিনিয়র কর্মকর্তাকেও বার্ষিক আমানত সংগ্রহের একই টার্গেট দেওয়া হয়েছে। শুধু নতুন বা দ্বিতীয় প্রজন্মেরই নয়, প্রথম থেকে সর্বশেষ সব প্রজন্মের ব্যাংকেরই কর্মকর্তাদের আমানত সংগ্রহের বড় টার্গেট দিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে। পাশাপাশি মানুষকে আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় সুদে আমানত সংগ্রহের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে।
বিশেষ করে বেসরকারি খাতের নতুন প্রজন্মের ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রের চেয়েও বেশি সুদ মিলছে; যা প্রায় ১৩ শতাংশের কাছাকাছি। এক মাস আগেও এ হার ছিল এক অঙ্কের ঘরে। নতুন ব্যাংকের পাশাপাশি পুরনো ব্যাংকগুলোতেও আমানতে এখন ১০ থেকে ১১ শতাংশ পর্যন্ত সুদ মিলছে। ব্যাংকগুলোতে আকর্ষণীয় সুদে আমানত সংগ্রহের এমন প্রতিযোগিতাই বলে দিচ্ছে, এ খাত কতটা তীব্র তারল্য সংকটে পড়েছে। এ পরিস্থিতি বছরের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বর্তমানে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ব্যাংকই তারল্য সংকটে ভুগছে। এদের মধ্যে কিছু কিছু ব্যাংক তাদের স্বাভাবিক ব্যাংকিং কর্মকান্ড চালাতেও হিমশিম খাচ্ছে এবং তারা আন্তব্যাংক কলমানির দ্বারস্থ হচ্ছে। অনেকেই আবার নতুন ঋণ বিতরণ বন্ধ রেখেছে। চলমান বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ বিতরণও করতে পারছে না কেউ কেউ।
মূলত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মে ঋণ ও আমানত রেশিও (এডিআর) সমন্বয়, ডলার বাজারে দীর্ঘমেয়াদি অস্থিরতা, ফারমার্স ব্যাংক কাণ্ডে সৃষ্ট আস্থাহীনতায় বেসরকারি ব্যাংক থেকে সরকারি আমানত তুলে নেয়া ও ব্যাসেল-৩ আওতায় বাড়তি মূলধন সংরক্ষণ করতে গিয়ে অধিকাংশ ব্যাংকে এ সংকট তৈরি হয়েছে।
এছাড়া জাতীয় নির্বাচন সন্নিকটে হওয়ায় সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের পরিবারের টাকা নতুন করে ব্যাংকিং সিস্টেমে আসছে না। যেগুলো ব্যাংকে রাখা আছে, তাও তুলে নেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, আমানতের সুদের হার বাড়ার কারণে ঋণের সুদের হারও বাড়তে শুরু করেছে। এতে ব্যবসার খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, এটাকে আমরা সংকট নয়, ব্যাংকিং খাতের সাময়িক সমস্যা হিসেবে দেখছি। আশা করছি অচিরেই এটা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। এজন্য বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এডি রেশিও সমন্বয়ের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া আমরা সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকের কাছে রাখতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। এ দাবির যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকগুলো ব্যবসার ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। নতুন-পুরনো অনেক ব্যাংকই আমানতের সুদ বাড়িয়ে দিয়েছে।
এতে ঋণের সুদ বেড়ে ব্যবসার খরচ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এডি রেশিও সমন্বয়ের কারণে যাদের তহবিলের সংকট হচ্ছে, তারাই মূলত আমানতের সুদ বাড়াচ্ছে। অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খানও প্রায় একই অভিমত প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, সার্বিক ব্যাংকিং খাত বিবেচনায় নিলে বলা যায় কোনো সংকট নেই। কারণ সরকারি খাতের ব্যাংকে এখনও প্রচুর উদ্বৃত্ত তারল্য রয়েছে। সোনালী ব্যাংকে এডি রেশিও মাত্র ৪০ শতাংশ। জনতা ব্যাংকে তা ৫০ শতাংশের মতো। জনতা ও রূপালী ব্যাংকেও উদ্বৃত্ত তারল্য আছে। তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যাংকও দেশকে সাপোর্ট করছে। ব্যবসায়ীদের চাহিদানুযায়ী ঋণ দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি ব্যাংকে সরকারি আমানত রাখার সুযোগ রাখা হয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ। এটা বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করলে বেসরকারি ব্যাংকের তারল্য সংকট বলে কিছুই থাকবে না।
তবে ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট আছে এটা মানতে নারাজ সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাস্তবে ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসাবেও বড় অঙ্কের উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল। গত দুই মাসে এমন কি হয়েছে, যে উদ্বৃত্ত থেকে খাতটি সংকটে চলে এলো। তার মতে, তারল্য সংকটের কথা বলা হচ্ছে মূলত সুদের হার বাড়ানোর জন্য। চেষ্টা চালাচ্ছে; যা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। এতে ঋণের সুদহারও বাড়বে।
বিডি২৪লাইভ/এএইচআর
বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯১
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬৭৮৬৭৭১৯০
মার্কেটিং ও সেলসঃ ০৯৬১১১২০৬১২
ইমেইলঃ [email protected]
পাঠকের মন্তব্য: