রাজধানীর ভাটারার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে গত ৯ নভেম্বর সকালে রাইদা পরিবহনের একটি বাস থেকে ১০ বছরের এক মেয়েকে ফেলে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড আ্যকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। নিহত শিশুটির নাম মরিয়ম আক্তার। শুক্রবার (১২ নভেম্বর) রাতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর ও টঙ্গী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত অভিযুক্ত দুজনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলেন- রাইদা পরিবহনের চালক রাজু মিয়া (২৫) ও তার সহযোগী ইমরান হোসেন (৩৩)।
শনিবার (১৩ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিহত মেয়েটি ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত ছিল। ঘটনার দিন সে সাহায্য চাইতে বাসটিতে উঠেছিল। হেলপার এসময় তাকে বলে, এটা গেটলক বাস। এই বলে বাসের গেট খুলে চলন্ত বাস থেকে মরিয়মকে ফেলে দেওয়া হয়। এতে গুরুতর আহত অবস্থায় ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, শিশুটির বাবা রনি মিয়া জানতে পারেন ভাটারা এলাকায় একটি মেয়ে শিশুর মরদেহ পাওয়া গেছে। ওইদিন বিকেলে তিনি মেয়ের মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে এই ঘটনায় রাতেই অজ্ঞাত গাড়িচালককে আসামি করে মামলা দায়ের করেন তিনি। পরবর্তীতে র্যাব এই ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করে। এসময় র্যাব ঘটনাস্থল ও আশপাশের প্রায় ৫০টির বেশি সিসিটিভি ছাড়াও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে। এরপরই শিশুটির মৃত্যু রহস্য উদঘাটন হয়।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে- মরিয়ম হেঁটে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করে যমুনা ফিউচার পার্কের বিপরীত পাশে আসে। এরপর সে রাইদা সিটিং সার্ভিসের একটি বাসে ওঠে। বাসটি সামনে যেতেই একজন পথচারীকে হাত দিয়ে ইশারা করতে থাকে। সিসিটিভি ক্যামেরার এক ফ্রেমের ঠিক পেছনে ভিকটিম মরিয়মকে আহত অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসিটিভি ক্যামেরার অবস্থান এবং সময় বিবেচনা করে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, এখানেই অকালে মৃত্যু হয় মরিয়মের। মঈন আরও বলেন, অর্থ সহায়তা চাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসটিতে উঠেছিল মরিয়ম। কিন্তু ভিকটিমের বাসে ওঠা এবং পড়ে যাওয়ার কোনো সিসিটিভি ফুটেজ না পাওয়ায় ওই বাসের ড্রাইভার ও হেলপারকে শনাক্ত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম এবং নজরদারি আরও বৃদ্ধি করা হয়। এরপরই পৃথক অভিযানে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হয়। তারা এই ঘটনায় নিজেদের সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মরিয়ম তার পরিবারের সঙ্গে খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকায় বসবাস করতো। তার বাবা রনি একজন প্রাইভেটকারচালক। মরিয়ম ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। তবে অর্থের অভাবে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর সে অর্থ সহায়তা পাওয়ার উদ্দেশ্যে কুড়িল ও আশপাশের এলাকায় ঘোরাঘুরি করতো। ঘটনার দিন সকালে মরিয়ম বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পথচারী ও বাস যাত্রীদের কাছে ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল।
র্যাব জানায়, বাসচালক রাজু মিয়া ছয়বছর ধরে রাইদা পরিবহনের গাড়ি চালান। পোস্তগোলা থেকে বাড্ডা-দিয়াবাড়ি পর্যন্ত তিনি রাইদা পরিবহনের বাসচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আর তার সহযোগী (হেলপার) ইমরান হোসেন আগে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। ছয়মাস আগে তিনি রাইদা পরিবহনে হেলপার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এদিকে, শিশুটিকে ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না এমন প্রশ্নে কমান্ডার আল মঈন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি। আমরা প্রায় অর্ধশতাধিক সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বাসটিকে শনাক্ত করেছি। বাসটির চালকের সঠিক কাগজপত্র ছিল কি না জানতে চাইলে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে তাদের সব কাগজপত্র সঠিক ছিল। এছাড়া বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে আমরা তদন্ত করবো। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে কমান্ডার মঈন বলেন, বাসটি গেটকল সার্ভিস ছিল। তাই মেয়েটিকে হেলপার প্রেসার করেছিল যেন দ্রুত নেমে যায়। নিহত মরিয়ম বাস থেকে নামার সময় বাসের গতি ছিল প্রায় ৪০ কিলোমিটার। এতে সে বাস থেকে রাস্তায় পড়ে মারা যায়।
পাঠকের মন্তব্য: