তথ্যপ্রযুক্তির প্রভাবে ডাকবক্স এখন ইনবক্সে

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৫৭ এএম

মোঃ আবদুল্লাহ-আল-অনিক, বাগাতিপাড়া (নাটোর) থেকে: চিঠি লেখাকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে জন্ম হয়েছিল চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙা ভাঙা হাতে এরকম অসংখ্য কালজয়ী গান-কবিতা ও প্রবন্ধের। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে সেই গানের কলি হারিয়ে এখন ‘নাই টেলিফোন, নাইরে পিওন, নাইরে টেলিগ্রাম, বন্ধুর কাছে মনের খবর কেমনে পৌঁছাইতাম। এই গানের কলি বাস্তবে রূপ নিয়ে আজ গ্রাম বাংলার অতীতের একমাত্র যোগাযোগের মাধ্যম ডাক বিভাগ আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় ঝিমিয়ে পড়েছে। সকাল থেকে ডাকে না আর ডাক হরকরা, আসে না চিঠি। যার ভেতরে লুকিয়ে থাকত অনেক অনুভূতির অনুকরণ, আনন্দের কোলাহল কিংবা চক্ষু ভেজা জলে হতাশার চাপা দীর্ঘশ্বাস।

আজকাল গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্র প্রযুক্তির প্রভাবে চাপা পড়েছে চিঠির অধ্যায়। শুধু সরকারি নথিপত্র পাঠানোর কাজেই ব্যবহৃত হচ্ছে ডাক বিভাগ।উপজেলার পৌর এলকার বাসিন্দা রেজাউন্নবী বলেন, ডাক বিভাগের রানার (ডাকপিয়ন) চিঠির ঝোলা নিয়ে দিনরাত ছুটতেন প্রাপকের দুয়ারে। দেশ-বিদেশে কর্মরতরা সংবাদ পাঠাতেন চিঠির মাধ্যমে আর টাকা পাঠাতেন মানি অর্ডারের মাধ্যমে। গ্রামে রানার ঢুকলে সকলেই উৎসাহ-উৎকণ্ঠায় থাকতেন না জানি কোন পরিবারে খাম বা পোস্টকার্ডে হাতে লেখা চিঠিতে সুখ কিংবা দুঃখের বারতা এলো। নিরক্ষর অভিভাবকরা বাড়িতে শিক্ষিত কেউ বা স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েদের দ্বারস্থ হতেন প্রেরিত চিঠিটি পড়ে দিতে। আর এই কাজগুলো সম্পন্ন হতো বাংলাদেশ ডাক বিভাগের সেবার সুবাদে। তথ্যপ্রযুক্তির ক্রমবিকাশে নব্বই দশক থেকেই ডিজিটাল সেবায় সারাবিশে^র মতো বাংলাদেশও এগিয়ে যেতে থাকে।

৭০ বছরের উর্দ্ধো বৃদ্ধাদের সাথে পোস্ট অফিসের কথা জানতে চাইলে তারা বলেন, চিঠিই ছিলো আমাদের আগের দিনের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। নানা ধরনের কথোপকথন হতো এই চিঠির মাধ্যমে। আর চিঠি পত্র আদান প্রদানের সকল ব্যবস্থায় ছিলো পোস্ট অফিস নির্ভর। হাতে কলম আর টেবিলে রাখা সাদা কাগজে চেয়ারে বসে লেখা পত্রগুলো পড়ে কখনো আনন্দে মুখে হাসি ফুটত।আবার কোনো চিঠি পড়ে চোখের পানিও গড়িয়ে পড়ত। কথাগুলো সবই উনিশ শতকের। প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ের ডাক ছিল ‘চিঠি’। যে চিঠি আসত ডাকঘরে। আর খামেভরা কাগজের চিঠির জন্য মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করত ঘণ্টার পর ঘণ্টা কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি। চিঠি আসতে একটু দেরি হলে রানারের দুয়ারে ছুটত স্বজন কিংবা প্রিয়জন।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় এবং তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে হারিয়ে যেতে বসেছে হাজার বছরের ঐতিহ্য সেসব পোস্ট অফিস। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলায় একটি উপজেলা পোস্ট অফিস, একটি সাব পোস্ট অফিস ও নয়টি ব্রাঞ্চ পোস্ট অফিস রয়েছে। এছাড়াও এই উপজেলায় বারটি ডাকবক্সও রয়েছে। কিন্তু আধুনিকয়তার ছোঁয়ায় তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে চিঠি পত্র আদান প্রদান না থাকায় বিলীনের পথে প্রায় পোস্ট অফিসগুলো। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে এমন আবেগের আমেজ একটু একটু করে দূরে গেছে। ডাকঘরের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে চিঠির জায়গা এখন মেসেঞ্জারের দখলে। তবে বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে মোবাইল, ল্যাপটপ ও কম্পিউটার। এ প্রযুক্তিতে ইন্টানেটের মাধ্যমে ই-মেইল, এসএমএস ও নানাভাবে যোগাযোগের দ্রুত মাধ্যম হওয়ায় উন্নত এ প্রযুক্তির দিকে মানুষ ধাবিত হচ্ছে।

চিঠি আদান-প্রদান নেই বললেই চলে। তাই এখন আর কানে আসে না ঠক ঠক শব্দ করে টিকিট লাগাতে বা সিল মারতে। অফিসিয়াল কিছু চিঠি পত্র ছাড়া অন্য কোনো চিঠি আদান-প্রদান হয় না বললেই চলে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা পোস্ট অফিসার মাহাবুর রহমান বলেন, সেই প্রাচীনকাল থেকেই চিঠির মাধ্যমে উঠে এসেছে মানুষের জীবনযাত্রার ইতিহাস। সৃষ্টিশীলতার বিকাশও ঘটতে দেখা গেছে চিঠির মধ্য দিয়ে। তথ্য প্রযুক্তির যুগে ইন্টারনেট যোগাযোগের দ্রুত মাধ্যম হওয়ায় মানুষ সে দিকেই ধাবিত হচ্ছে। মনের ভাব বিনিময়ের জন্য চিঠি ও পোস্ট কার্ড হরহামেশাই ব্যবহার হলেও এই প্রজন্মের অনেকেই চেনেও না এক সময়ের জনপ্রিয় যোগাযোগের এই পোস্ট কার্ডকে। ইতোমধ্যেই পুরনো জৌলুস হারাতে বসেছে ডাক বিভাগ ফলে কিছু অফিসিয়াল চিঠি পত্র ছাড়া আর কোন চিঠি পত্র আদান প্রদান নেই বললেই চলে। তবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরাও চেষ্টা করছি গ্রাহকদের সেবা দিতে।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: