'বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম'র সাথে কোরআনে ১৯ এর রাজত্ত্ব

প্রকাশিত: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৪, ০৫:৩৫ এএম

ফকির উয়ায়ছী:

শ্রদ্ধেয় এক বিজ্ঞজন পেপারে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বিষয়ে লেখা দেখে এই সম্পর্কে লেখার আগ্রহ হলো। “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” ক্ষুদ্র এই বাক্যটির মর্তবা যে কত বিশাল তা আমার মত অজ্ঞ আল্লাহর এক অধম সৃষ্টি কতটুকুই বা আলোচনা করতে পারবো। শুধু চেষ্টা কিছুটা হলেও মানুষের মাঝে পৌচ্ছানো যা আমার মুরশিদ কিবলাজানের এর খেদমত করে জানতে পেরেছি। এই “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” শব্দটিতে ১৯টি আরবী অক্ষর আছে তা দিয়ে আল্লাহ কোরআনটিকে যেভাবে সাজিয়েছেন তার কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করছি আমার অল্প জ্ঞানে। প্রথমেই একটি আয়াতে দিকে দৃষ্টি দিতে বলবো ৭৪ নং সূরা মুদ্দাসসির এর ৩০ নং আয়াত। নিম্মে আমি আপনাদের সুবিধার জন্য বাংলা এবং ইংরেজি অর্থ সহ দিয়ে দিলাম।

৭৪:৩০# এর উপর আছে উনিশ। (Over it are Nineteen.)

উক্ত আয়াতটিতে উনিশের কথা বলা হয়েছে আমরা যদি লক্ষ করি কোরআনে এই বাক্যটি মোট ১১৪ বার এসেছে যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সূরা আছে তন্মধ্য ৯নং সূরা তওবায় “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটি নেই কিন্তু ২৭ নং সূরা নামল এর শুরুতে এবং ৩০ নং আয়াতে “বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম” বাক্যটি দুইবার এসেছে অর্থাৎ ১১৪ বারই হয় যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এই উনিশ দিয়ে আল্লাহ কিভাবে যে বেধে রেখেছেন তিঁনার অখন্ড বানীগুলিকে তার অল্পই আমার জানা। তা আপনাদের মাঝে শেয়ার করার চেষ্টা করছি মাত্র। পবিত্র কোরআনে তিঁনি আল্লাহ শব্দটি ২৬৯৮ বার ব্যবহার করেছেন যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ‘রব’ শব্দটি এসেছে সর্বমোট ১৫২ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ‘ইসম’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে ১৯ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ‘রহমান’ শব্দটি ব্যবহার হয়েছে ৫৭ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। এবার কিছু সূরার হরফে সংখ্যা দিয়ে আলোচনা করি দেখা যাক কি পাওয়া যায়।

৬৮ নং সূরা কলম শুরুতে ‘নুন’ হরফটি আছে এ সূরায় ‘নুন’ হরফটি আছে ১৩৩ বার যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৭ নং সূরা আরাফ এই সূরায় ‘আলিফ’ ২৫২৯বার, ‘লাম’১৫৩০বার, ‘মীম’ ১১৬৪ বার এবং ‘সোয়াদ’ এসেছে ৯৭বার। এই চারটি সংখ্যার যোগফল ৫৩২০ যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৩৬ নং সূরা ইয়াসীন এই সূরায় ‘ইয়া’ এবং ‘সীন’ হরফ দুইটি ব্যবহার হয়েছে ২৮৫ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১২ নং সূরা ইউসুফ ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘রা’ হরফ গুলি ব্যবহার হয়েছে। এই হরফগুলির যোগফল ২৩৭৫ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১৪ নং সূরা ইব্রাহিম ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘রা’ হরফ গুলি ব্যবহার হয়েছে। এই হরফগুলির যোগফল ১১৯৭ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১৫ নং সূরা হিজর ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘রা’ হরফ গুলি ব্যবহার হয়েছে। এই হরফগুলির যোগফল ৯১২ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
১৩ নং রাদ ‘আলিফ’ ‘লাম’ ‘মীম’ ‘রা’ হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ১৪৮২ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।
৩ নং সূরা আলে ইমরান ‘আলিফ’ ২৫২১ বার, ‘লাম’ ১৮৯২ বার, ‘মীম’ ১২৪৯ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফগুলির যোগফল ৫৬৬২ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

২৯ নং সূরা আন কাবুত ‘আলিফ’ ৭৭৪ বার, ‘লাম’৫৫৪ বার, ‘মীম’ ৩৪৪ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ১৬৭২ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৩০ নং সূরা রুম ‘আলিফ’ ৫৪৪ বার, ‘লাম’ ৩৯৩ বার, ‘মীম’ ৩১৭ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ১২৫৪ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৩১ নং সূরা লোকমান ‘আলিফ’ ৩৪৭ বার, ‘লাম’ ২৯৭ বার, ‘মীম’ ১৭৩ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ৮১৭ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

৪১ নং সূরা হা.মিম. সাজদা ‘আলিফ’ ২৫৭ বার, ‘লাম’ ১৫৫ বার, ‘মীম’ ১৫৮ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ৫৭০ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

১৯ নং সূরা মারইয়াম ৫টি হরফ দ্বারা গঠিত ‘ক্বাফ’ ১৩৭ বার, ‘হা’ ১৭৫ বার, ‘ইয়া’ ৩৪৩ বার, ‘আইন’ ১১৭ বার, ‘সোয়াদ’ ২৬ বার হরফ গুলি সর্বমোট ব্যবহার হয়েছে। এই হরফ গুলির যোগফল ৭৯৮ বার যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য।

১৯ দ্বারা এরকম আরও যে কত কিছু করে রেখেছেন সেটা জানা খুব কম মানুষের পক্ষেই সম্ভ। আর একটি জিনিষ উল্লেখ না করলেই নয় সেটি হচ্ছে আল্লাহ কোরআনে বারোটি জায়গায় লুত সম্প্রদায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। প্রতিবারই তাদের ‘ক্বওমে লুত’ বলে অভিহিত করেছেন। কিস্তু সূরা ক্বাফ এর ১৩ নং আয়াতে ‘ক্বাওমে লুত’ এর বদলে ‘ইখওয়ানু লুত’ বলেছেন। অর্থের অর্থই এক সমান। যদি ‘ক্বওমে লুত’ শব্দটি ব্যবহার করা হতো তাহলে এ সূরায় ‘কাফ’ হরফ সংখ্যাটি ৫৮বার হয়ে যেত যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হতো না। ‘ইখওয়ানু লুত’ শব্দ ব্যবহার করে একবার কাফ হরফটি কমিয়েছেন অর্থাৎ ‘কাফ’ হরফটির সংখ্যা হয়েছে ৫৭ যাহা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য। ব্যতিক্রম করার কারণ হয়তো ১৯ দ্বারা মিলানোর জন্য।

প্রচলিত কোরআনের সঠিক আয়াত সংখ্যা যেটা আছে তা হচ্ছে ৬২৩৬। কিন্তু ৬২৩৬ আয়াত সংখ্যা ১৯ দ্বারা হয় না এটার জন্য মনে কিছুটা সংসয় রয়েই যায়!

আমার এক চাচা মুরশিদ তিনার কবিতায় লিখেছেন।
দীন ইসলামের পাচঁটি বেনা, মোয়াককেলও পাচঁ জনা
নবী-আলী-মা ফাতিমা-হাসান-হোসেন দীন পানা।
উনিশ জনা ভীষন বীরে দেয় পাহারা দীনের ঘর
তাসমিয়াতে তার ইশারা দেখলনা তা দীন কানা।।

অন্য এক কবিতায় লিখেছেন
বিছমিল্লাহ আর পাক পাঞ্জাতন এক মিলে রয় কি প্রকারে
কামেল পীরের দামন ধরে হিসাব শিখে লও তাহার।
আল্লাহ পাক আর কোরআন পাকে রূহ অজুদের মিলন হয়
সাত হরফে কোরান নাজিল, উনিশ জনা রক্ষী তার।।

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ এর ১৯ এর সাথে যে সম্পর্ক কোরআনের আছে সেক্ষেত্রে ঠিক একই সম্পর্ক আছে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সাথে কোরআনের। এটা আমি নিম্নের হাদিস থেকে বুঝতে পারি সহজেই। হাদিসটিও নাম্বার সহই উদৃতি করলাম।

মুসলিম শরীফ - ৬০০৯ এবং মেশকাত - ৫৮৯৩ নং হাদীস বিদায় হজ্ব, গাদির খুম নামক স্থানে শেষ ভাষনে মুহাম্মদ (সা:) বললেন আমি তোমাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন দুইটি বস্তু রাখিয়া যাইতেছি প্রথমটি হইল আল্লাহ্র কিতাব আর দ্বিতীয় বস্তুটি হইল আমার আহলে বাইত। এদের একটি আরেকটির তুলনায় গুরুত্বপূর্ন। আল্লাহর কিতাব, আসমান থেকে জমিন পর্য্যন্ত একটি টানা রশি। আর একটি আমার আহলে বায়েত। এ বস্তুদ্বয় কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না হাওজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হবার আগ পর্য্যন্ত। অতএব দেখ, এই দুই বস্তু সম্পর্কে তোমরা আমার সঙ্গে কিভাবে মতভেদ করবে?

উক্ত হাদিসটিতে আল্লাহর নবী বলেছেন এদের একটি আরেকটির তুলনায় গুরুত্বপূর্ন।এ বস্তুদ্বয় কখনো বিচ্ছিন্ন হবে না হাওজে কাওসারে আমার সাথে মিলিত হবার আগ পর্য্যন্ত।কাজেই কোরআনের সাথে আহলে বায়াতে সম্পর্ক নিরুপন করতে পারলেই বুঝা যাবে তাসমিয়া অর্থাৎ (বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) কোরআন এবং আহলে বায়াতের ভেদ।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য: